বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ভবদহ দিবসে জলাবদ্ধতা নিরসনে ছয় দফা দাবিতে গণসমাবেশ করেছে ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি। রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকা মশিয়াহাটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর ভবদহে জলাবদ্ধতা দূরকরণে রাজপথ ও রেলপথ অবস্থান কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে সংগ্রাম কমিটির নেতাসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। সেই থেকে ৫ অক্টোবর ‘ভবদহ দিবস’ পালন করে আসছে ভবদহবাসী। সমাবেশে ভবদহে আন্দোলনের পুলিশের লাঠিচার্জে আহত সেই নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
ভবদহ অঞ্চল যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত। এই এলাকার পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর মাধ্যমে। তবে পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারানোয় চার দশকের বেশি সময় ধরে পানি নিস্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। এতে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা ভুগছে প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ। এখনও ভবদহ এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে হাটু সমান পানি। ডুবে আছে ফসলি মাঠ, ঘের সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ভবদহবাসীর বিভিন্ন সময়ে দাবির প্রেক্ষিতে ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সিরসনে ৮১.৫ কিমি নদী খননে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভবদহ দিবসে জলাবদ্ধতা নিরসনে ছয় দফা দাবিতে গণসমাবেশ করেছে ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি।
ছয় দফা দাবিসমূহ হলো-দ্রুত আমডাঙ্গা খালের জমি অধিগ্রহণ ও সংস্কার কাজ শুরু করা। ৮১ কিলোমিটার নদি খননের কাজ শুরু করা। বিলে বিলে টিআরএম চালু। ২১ ভেন্টের সকল গেট খুলে দেয়া। ঘের নীতিমালা, ২০১৯ বাস্তবায়ন ও ২০১৬ সালের পাঁচ অক্টোবর নওয়াপাড়ায় পুলিশি হামলার সাথে জড়িতদের বিচার করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভবদহ অঞ্চলে প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কারণে বাড়ি—ঘর, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কবরস্থান, শ্মশান, মসজিদ, মন্দির, খেলার মাঠ, রাস্তা, ঘাট, ফসলী জমি পানিতে ডুবছে। নিত্য সঙ্গী এই স্থায়ী জলাবদ্ধতায় শিশু নারী বৃদ্ধ ডুবে মরছে। রোগ,বালাই নিয়ে এখানকার বিপন্ন জীবন। মানুষ সৃষ্ট এই জলবদ্ধতার গ্রাস থেকে বাঁচার জন্য হামলা, নিপীড়ন, হয়রানির শিকার হয়েও নিতান্তই বাঁচার তাগিদে এলাকার মানুষ লাগাতার সংগ্রাম করে আসছে। বর্তমান সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভবদহ অঞ্চলের মানুষের নিম্নোক্ত প্রাণের দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জনপদের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। অতীতের মত বর্তমানেও একটি বিশেষ চক্র টিআরএম বাস্তবায়নের সরকারি সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্থ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। যে বিলে টিআরএম হবে সে বিল ভরাট ও উঁচু হবে। জমি হয়ে উঠবে চাষাবাদের উপযোগী। বিলের জমির মালিক, ঘেরমালিক, বর্গাচাষী, শ্রমজীবী, মৎস্যজীবী এবং বিলের উপর নির্ভরশীল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবাই ক্ষতিপূরণের আওতাভুক্ত হবে।
ক্ষতিপূরণের টাকা ইউনিয়ন কাউন্সিল অথবা ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সংগঠনের আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল, ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বাংলাদেশ আহ্বায়ক ডা. অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, সংগঠনের উপদেষ্টা তসলিম উর রহমান।
সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু, কপোতক্ষ নদ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা অ্যাড. আমিনুর রহমান হিরু, মুক্তেশ্বরী সংস্কার আন্দোলনের নেতা আলাউদ্দিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের সাবেক আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ।