বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের কেশবপুর উপজেলার চিংড়া গ্রামের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। ২০০৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। আওয়ামী পরিবারের বেড়ে উঠলেও; বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই জাতীয়তাবাদী আর্দশের রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন। হামলা-মামলা-নির্যাতনে পরীক্ষিত ছাত্রনেতা শ্রাবণকে দায়িত্ব দেয়া হয় ছাত্রদলের শীর্ষ পদে। আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের বিএনপির রাজনীতি করার বিষয়টি শ্রাবণের বাবাও ভালোভাবে নেননি। এ কারণে ছেলের সঙ্গে ইতোমধ্যেই ছিন্ন করেছেন সম্পর্ক। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ঘর ছাড়া শ্রাবণ। এমনকি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানেও অংশ নেন না তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাবা ত্যাজ্যপুত্র করলেও রাজনৈতিক চেতনা থেকে সরে আসেননি তিনি। দলের জন্য পরিবার ছাড়ার এ নজির স্থাপন করা শ্রাবণ আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন পেয়েছেন যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে।
তবে ছেলে যে সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় এতদূর এসেছে সেটা অকপটে স্বীকার করেছেন কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ভিন্ন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ছেলের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু মাঝে মধ্যে তার মায়ের সঙ্গে সে মুঠোফোনে কথা বলেন। দেড় দশকের বেশি সময় আমাদের সাথে কথা হয়নি, বাড়িতে আসেনি। সে এত দূর এসেছে, মনোনয়ন পেয়েছে তার নিজস্ব যোগ্যতা ও প্রচেষ্টায়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বার্ধ্যক্যজনিত কারণে অসুস্থ শ্রাবণের বাবা। সারাদিন বাড়িতেই শয্যাশায়ী। তিনি বলেন, ‘সন্তান হিসাবে তাকে তো বদ দোয়া দিতে পারি না। তবে আমি একটা দল করি, সে আর একটা দল করে। আমি আমার দলের প্রতি অনড়। প্রবীণ এই রাজনীতিক বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া শ্রাবণকে পরামর্শ দিয়েছেন সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের আশ্রয় না দেয়ার।’
মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম ও কাজী রশিদা দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে শ্রাবণ সবার ছোট। শ্রাবণের বাকি তিন ভাইও রাজনীতিতে জড়িত। বড় ভাই কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। মেঝো ভাই কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর সেঝো ভাই কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক। দীর্ঘদিনের পারিবারিক রাজনৈতিক চর্চার বিপরীতে গিয়েছেন শ্রাবণ।
রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর ঢাকাতে অবস্থান করছিলেন। দলের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে শ্রাবণ সামনে থেকে দিয়েছেন নেতৃত্ব। যে কারণে বহুবার তাকে হামলা-মামলার শিকারও হতে হয়েছে। ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল শ্রাবণকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি করা হয়। পরে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর শ্রাবণকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর নিজ জন্মভূমি কেশবপুরে ফেরেন শ্রাবণ। দীর্ঘ সময় পরে নিজ উপজেলায় আসার খবরে মোড়ে মোড়ে ফুল নিয়ে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। তার এই বহরে কেশবপুর থেকে প্রায় দেড় হাজার মোটরসাইকেল ও শতাধিক মাইক্রোবাসে নেতাকর্মীরা অংশ নেন। কর্মসূচি থেকে তিনি যশোর-৬ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে ঘোষণা দেন। অবশেষে সোমবার সন্ধ্যায় তার জন্মভূমি কেশবপুর আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। রাজনীতির প্রতি ত্যাগের মূল্যায়ন করায় দলের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেছেন শ্রাবণ। তিনি বলেন, পরিবার ভিন্নমতাদর্শের হলেও নির্বাচনে প্রভাব পড়বে বলে জানান শ্রাবণ। দলে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও সবাইকে নিয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করে তারেক রহমানকে আসনটি উপহার দিবেন। কেশবপুরের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা দূর করাসহ শ্রতিশ্রুতি দেন কেশবপুরবাসীর মন জয় করে উন্নয়নে ভূমিকা রাখার।’
২৩৭ আসনে বিএনপি যেসব প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে; তার ভিতরে সর্বকনিষ্ঠ শ্রাবণ। নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপির প্রার্থী তালিকায় তারুণ্যের বার্তা দিচ্ছেন শ্রাবণ। ইতোমধ্যে আসনটিতে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে তরুণ প্রতিনিধিত্ব ভূমিকা রাখবে আসনটিতে। তৃণমূলের মতামত নিয়ে তারুণ্যনির্ভর প্রার্থী দেয়ায় তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছে উপজেলার সহ সভাপতি মশিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘শ্রাবণের মনোনয়নে খুশি স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলের জন্য পরিবার ত্যাগের মূল্যায়ন করেছেন জিয়া পরিবার। আসনটি পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন তারা।’ স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিংয়ের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিন্তু শ্রাবণের মনোনয়ন ঘোষণাতে দলে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে নিস্ক্রিয়রা। পরিবার নয়; শ্রাবণের রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারে জনগণ মূল্যায়ন করবে এমনটা মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

