বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে ত্রয়োদশ নির্বাচন নিয়ে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবনা শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেলে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় মাঠে এই সংলাপের আয়োজন করে দেশের ২৪ ঘন্টার বেসরকারি সংবাদ ভিত্তিক টেলিভিশন ‘স্টার নিউজ’। এতে উপস্থাপক ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের প্রশ্ন ও ভাবনার উত্তর দেন যশোর-৩ আসনের বিএনপি দলীয় ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সদর আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদরের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শোয়াইব হোসাইন, যশোর-৪ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল ও এনসিপি যশোরের প্রধান সমন্বয়ককারী মো. নূরুজ্জামান।
সংলাপে বিগত সরকারের আমলের অনিয়ম দুর্নীতি, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, সমস্যা এবং আগামী যশোরের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়। এতে প্রার্থী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে চার অতিথিই তাদের দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
অনুষ্ঠানে সদর আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদরের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শোয়াইব হোসাইন বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চাই। জনগণ যাতে কালোটাকার বিরুদ্ধে প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের রায় দিতে পারেন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে।’
এনসিপি যশোরের প্রধান সমন্বয়ককারী মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বিগত ফ্যাসিস্টের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এখনও মাথা চড়া দিয়ে উঠছেন। যশোরের ভবদহ সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতাকর্মীরা জলাবদ্ধতার দুরীকরণে অর্থ লুটপাট করেছে। যশোরের রাজনৈতিক দলগুলো সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসলে ভবদহের সমস্যা দূর করা সহজ হবে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার প্রকল্প নিয়েছে; সেগুলো বাস্তবায়ন হলে অনেকটা সমাধান হবে। এছাড়া যশোরের অপরিকল্পিক নগরায়ন, শহরের জলাবদ্ধতা, যশোর জেনারেল হাসপাতালের সংকট নিয়ে আলোচনা করেন এই নেতা।’
যশোর-৪ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সকল ধর্মের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হলেও সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার আসনে নওয়াপাড়া নৌ বন্দরে নানা সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি নির্বাচিত হলে নওয়াপাড়া বন্দরকে আধুনিকায়ন ও বাণিজ্যনগরী গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবেন বলে জানান। চাঁদাবাজমুক্ত বন্দর নগরী হয়ে গড়ে উঠবে। জেলার স্বাস্থ্য, কৃষি, বেনাপোল বন্দর কিশোর গ্যাং, নিয়ে নানা সমস্যা তুলে ধরেন। তার দল নির্বাচিত হলে এসব সমস্যা সমাধানে তার দল ভূমিকা রাখবে। যশোর-৩ আসনের বিএনপি দলীয় ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘যশোরের দুঃখ বলা হয়ে থাকে ভবদহকে। সেই ভবদহ এলাকা বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যে প্রকল্প নিয়েছিলেন; তখন ভবদহবাসী ভালো ছিলেন। এরপর পরবর্তী দল ক্ষমতায় এসে প্রকল্পের নামে লুটপাট করেছে বলে দুঃখ কাটেনি। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে ভবদহের সমস্যা সমাধানে বর্তমান সরকারের সঙ্গে বারংবার যোগাযোগ করেছে। তার দল ক্ষমতায় এলে সবার আগে ভবদহ সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। যশোর সদর হাসপাতালে নানা সংকট তুলে ধরার পাশাশি তিনি অভিযোগ করেন, বিগত সরকার স্বাস্থ্যখাতকে ধংস করেছে। তার প্রয়াত পিতা তরিকুল ইসলাম যশোরের স্বাস্থ্যখাতে যে উন্নয়ন করেছে; সেই অবস্থায়ই রয়েছে। জনগণ বিএনপিকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলে জেলার স্বাস্থ্যখাত অগ্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, কর্মসংস্থানের জায়গা সৃষ্টিতে কাজ করবে। ৫০০ শয্যা মেডিকেল কলেজ, ক্রীড়াঙ্গনে পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে নগরায়ন করা হবে। এছাড়া নওয়াপাড়া নৌবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরকে আধুনিকায়নের সঙ্গে ব্যবসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। যশোরকে সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং অস্ত্রের ঝনঝনানী মুক্ত করে শান্তির যশোর গড়তে সবাইকে নিয়ে তার দল কাজ করবে।’
অনুষ্ঠানে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবু, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, যশোর চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক এজাজ উদ্দিন টিপু, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি গোলাম কুদ্দুস, প্রচার সেক্রেটারি শাহবুদ্দিন বিশ্বাস, ক্রিড়া সংগঠক মাহাতব নাসির পলাশ, যশোর পূজা পরিষদের সভাপতি দিপংকর দাশ রতন, যশোর নাগরিক সমাজের সমন্বয়কারী মাসুদুজ্জামান, বিবর্তন যশোরের সভাপতি নওরোজ আলম খান চপল প্রশ্ন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্টার টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাঈম আবির। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন স্টার টেলিভিশনের যশোর প্রতিনিধি জাহিদ হাসান।

