বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর শহর, সদর ও পেশাজীবী থানা উদ্যোগে মঙ্গলবার যশোর জেলা পরিষদ (বিডি হল) মিলনায়তনে রোকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসাইন। সম্মেলনে তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও সংগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মোবারক হোসাইন বলেন, অতীতের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিহিংসামূলক মনোভাবের কারণে বহু নেতাকে অন্যায়ভাবে হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, জুডিশিয়াল ক্লিনের নামে সাক্ষী তৈরি, মানুষকে তুলে নিয়ে অন্য দেশে পাচার এবং বিদেশে বসে রায় লেখার মতো কেলেঙ্কারির মাধ্যমে আমাদের বহু শীর্ষ নেতাকে ফাঁসির দণ্ডে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক রায়ে প্রমাণ হয়েছে আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দননা। আমাদের সকল নেতায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার ছিলেন এবং জাতি সেই সত্যের প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হয়েছে।
তিনি এ টি এম আজহারুল ইসলামের প্রসঙ্গ তুলে জানান, তিনি ছিলেন রাজনৈতিক অপব্যাখ্যা ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে তিনি আজ আবারও জাতির সামনে সত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। মোবারক হোসাইন মনে করেন, এ ধরনের রায় জাতিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে এবং এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান অতিথি বলেন, দল ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছে যাতে ২৬ শের নির্বাচন অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের মতো না হয়। তিনি বলেন, এই নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। সাধারণ মানুষ যেন নিরাপদে ভোট দিতে পারে এটাই জাতির প্রত্যাশা। তিনি নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে বলেন, কোনো পক্ষপাতিত্ব গ্রহনযোগ্য নয়। জাতির আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করে নির্বাচন কমিশনকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
মোবারক হোসাইন বলেন, সরকার জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাস্তবায়ন করে জাতির আস্থা অর্জনের সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। তিনি মনে করেন, ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশাকে সম্মান জানানোই হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক বার্তা।
তিনি জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। যশোর জেলায় ইতোমধ্যে ছয়টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে রাখার নানান প্রচেষ্টা চললেও জনগণ এখন আগের চেয়ে বেশি আগ্রহ ও প্রত্যাশা নিয়ে জামায়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। ইসলামভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এখন মানুষের আকাক্সক্ষা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম কোনোভাবেই শুধুই বিরোধী রাজনীতি করতে চায় না; বরং জনগণের ম্যাণ্ডেট নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রসুল। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যশোর-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ভিপি আব্দুল কাদের, জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর সিদ্দিক, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক কুদ্দুস, মাওলানা রেজাউল করিম, অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম আবুল হাসিম রেজা, অফিস সেক্রেটারি নুর ইআলা নুর মামুন, গাজী মুকিদুল হকসহ অন্যান্য জেলা নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যশোর শহর জামায়াতের আমির অধ্যাপক শামসুজ্জামান তিনি বলেন, রুকনদের ত্যাগ, শৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমেই দল শক্তিশালী ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে।

