বাংলার ভোর প্রতিবেদক
মণিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসন গঠিত। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন, সেটি নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ওই তালিকায় যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের প্রার্থীর নাম খালি রাখা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জোটের শরিক নাকি নিজ দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে, সেটি নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। বারবার জোটের শরীককে ছেড়ে দেয়া আসনটি এবার ছাড়তে নারাজ বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন। পরবর্তীতে যে কয়টি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে এই আসনে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে মনোনয়ন দেয়। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের ছেলে মাওলানা রশিদ আহমেদ। তবে বারবার জোটের শরীককে ছেড়ে দেয়া আসনটি এবারও জোটকে দেয়ার গুঞ্জনে ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রাথমিক মনোনয়নে প্রার্থী নাম ঘোষণা না হলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠ সরগরম রেখেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলের নেতাকর্মীদের দাবি, বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের জুলুম নির্যাতন সহ্য করে বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে ছিল। বিএনপি জোটের এমপি হলেও তারা কখনো মাঠে ছিল না। এ জন্য আগামী নির্বাচনে বিএনপি দলের একজন অভিভাবক চায়। দলের ভিতর থেকে যে কাউকে মনোনীত করুক, আমরা তাকেই ধানের শীষের প্রতীকে বিজয়ী করে সংসদে পাঠাবো।
উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ বছর ফ্যাসিসদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করেছি। আন্দোলন সংগ্রাম করে উপজেলার অনেক রাজনৈতিক সহকর্মীকে হারিয়েছি। এখন বিএনপির সুদিন অনেকেই প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ বছর আসনটিতে শরিক দলের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। বারবার শরিক দলের কাছে ছেড়ে দিয়ে আমরা রাজনীতির মাঠে নেতৃত্ব শূণ্যতায় ভুগেছি। আমাদের দাবি উপজেলা থেকে যারা আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছে; তাদের মধ্যে থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়ার।
মণিরামপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৭টি ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছাচ্ছি। উপজেলায় বিএনপির একজনকে অভিভাবক হিসাবে চাই। যিনি আগামী সংসদে এই অবহেলিত মণিরামপুরের নানা সমস্যা সম্ভবনার কথা বলবেন। কিন্তু আসনটি যদি শরিক দলের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়; তৃণমূলের নির্যাতিত নেতাকর্মীরা হতাশ হবে। বারবার শরীক দলের কাছে ছেড়ে দিয়ে আসনটিতে রাজনীতিতে অভিভাবক শূণ্যতায় ভুগেছে তৃণমূলের কর্মীরা।’
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা ইফতেখার সেলিম অগ্নি বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষ সাম্প্রদায়িকতাকে খুব বেশি প্রাধান্য দেয় না। এই আসনে ৮০ হাজারের বেশি সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ আছেন। তারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে অভ্যস্ত নন। এখানে কট্টরপন্থার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সেক্ষেত্রে বিএনপির কেউ মনোনীত হলে উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দল হিসেবে ভোটাররা ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে স¦াচ্ছন্দ্যবোধ করবে।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাড. শহিদ মুহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের আমলে জোটের শরীক আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিল না। তারা মামলা, জেল জুলুমের শিকার হয়নি। তাদেরকে আসন ছেড়ে দিলে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হবেন। আসনটি হারানোর শংকা তৈরি হবে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় যেকোন নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। তারপর তৃণমূলের কর্মীদের নিয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করে তারেক রহমানকে এই আসনটি উপহার দিবো।’

