বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের কেশবপুরে যৌথবাহিনী অভিযানে অস্ত্রসহ আটক বহিস্কৃত যুবদল নেতা ওয়ালিউর রহমান উজ্জ্বলের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তারা মৃত্যু হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ উজ্জল বিশ্বাস ও আরো তিনজনকে আটক করা হয়। উজ্জ্বল পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। উজ্জল কেশবপুর উপজেলার আলতাপোলের নাজির বিশ্বাসের ছেলে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহম্মেদ।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহম্মেদ জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার পর উজ্জলকে কারাগারে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার নথিতে উল্লেখ ছিল, তিনি গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। কারাগারে গ্রহণকালে যেসব প্রশ্ন করা হয়, তিনি তার উত্তর স্বাভাবিকভাবেই দিয়েছিলেন। তবে তিনি ‘ইন্টারনাল হ্যামারেজের’ শিকার ছিলেন। এ সময় তাকে কারা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় ১৫ মিনিট পর তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানান, তার শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপা আঘাত ছিল এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে। আটক উজ্জ্বল পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন যশোর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যশোরের কেশবপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশসহ চারজন আটক হন। ওই সময় বিদেশি পিস্তল, ধারালো অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন, কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতি নরেন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে ও পৌর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ (৪০) ও তার ভাই আলম (৩৫), আলতাপোল গ্রামের নাজির বিশ্বাসের ছেলে উজ্জ্বল (৩৫) ও নতুন মূলগ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে রাসেলকে (৩০)। আটকদের শুক্রবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়ার পথে উজ্জলের মৃত্যু হয়।
উজ্জলের বড় ভাই ও কেশবপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু অভিযোগ করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যৌথবাহিনী উজ্জলের বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে পুরো বাড়ির ভিতর তল্লাশির নামে ভাংচুর করেছে তারা। এ সময় উজ্জলের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু পায়নি। থানায় এসে তার নামে অস্ত্র, মাদক দেখিয়ে মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অভিযানের সময়ে বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই সময় উজ্জলের হাত মুখ বেঁধে রাত তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত অমানুষিক নির্যাতন করেছে তারা। নির্যাতনের পর গভীর রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত যে চিকিৎসা পায়নি। অভিযানে অমানুষিক নির্যাতন ও চিকিৎসার অভাবে উজ্জলের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।’
উজ্জলের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। সকাল থেকে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং নিহতের স্বজনেরা হাসপাতালে ভিড় করেন। ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এই অভিযান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রীয়া জানান। এই বিষয়ে হাসপাতালের তত্বাবধায়কসহ চিকিৎসকেরা কোন মন্তব্য করেননি। তবে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবুল বাশার বলেন, ‘অভিযানের পর আসামিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পুলিশ বাদী হয়ে চার আসামির নামে মামলা করে। পরিবার থেকে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে; সেটা সঠিক নয়।’

