# কুয়াশা কমলেও কমছে না শীত-আবহাওয়া অফিস
# ভিড় বেড়েছে গরম পোশাকের দোকানে
#শীতজনিত রোগ বাড়ছে শিশু বয়স্কদের
বাংলার ভোর প্রতিবেদক:
পৌষের শুরুতে যশোরে জেঁকে বসেছে শীত। হাঁড় কাপানো শীতের সঙ্গে গত তিনদিন ধরে বৃষ্টির মতো ঝরছে ঘন কুয়াশা। যেন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরো এলাকা। এর সঙ্গে হিমেল হাওয়া শীতের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তীব্র শীতের কারণে গরম কাপড়ের অভাবে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষজন।
পেটের তাগিদে বের হলেও আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত নানান রোগে। যশোর বিমানবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত তিনদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ১৪ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দুপুর পর্যন্ত দেখা মিলছে না সূর্যের। ফলে ঘন কুয়াশার সঙ্গে জেঁকে বসা শীতে কাবু করছে সববয়সী মানুষের। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী দুই থেকে তিন দিনে কুয়াশা কমলেও শীত কমছে না।
ঋতুরাজে চলছে পৌষ মাস। এক সপ্তাহ ধরেই জেঁকে বসে শীত। তবে পৌষের প্রথম থেকে কুয়াশার তীব্রতা না থাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত কমতে থাকে। তবে গত তিনদিন ধরে যশোরে গভীর রাত থেকে বৃষ্টির মতো ঝরছে ঘন কুয়াশা।
সেই কুয়াশা সকাল পেরিয়ে দুপুর হলেও সুর্যের দেখা মিলছে না। যার কারণে দিনের বেলাতেও সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে। সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। এতে করে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের কারণে প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন তেমন একটা ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। সড়কে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় রোজগার কমায় বিপাকে পড়েছেন ভ্যান-রিকশাচালকরা।
একইভাবে কাজে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষজন। আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবার যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার দুই ডিগ্রি কমে তাপমাত্রার পারদ দাঁড়ায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর শনিবার ছিলো ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সিলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন শীতের তীব্রতা থাকলেও কমতে পারে কুয়াশার ঘনঘটা।
লালদীঘি পাড় এলাকায় কথা হয় দিনমজু নুরনবীর সঙ্গে। শহরের পালবাড়ি এলাকায় বসবাস করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন শীতের প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও রোববার থেকে শীতের মাত্রা অনেকটা বেড়েছে। গতকালকের চেয়ে আজ আরও বেশি শীত পড়েছে। যত দিন যাচ্ছে তত শীতের মাত্রা বাড়ছে। বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝরছে। এত পরিমাণ কুয়াশা ঝরছে যে কুয়াশার কারণে অনেক বেলা পর্যন্ত ঠিকমতো কোনও কিছু দেখা যাচ্ছে না। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও মনে হচ্ছে সন্ধ্যা লেগে গেছে। সেই সঙ্গে হিমেল হাওয়া বইছে।
এতে করে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এতে করে ঠিকমতো কাজেও যেতে পারছি না। আবার পেটের তাগিদে বের হলেও যারা কাজে নেবে তারা না আসায় আগের মতো কাজ মিলছে না। কাজ করতে না পারায় সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের মতো মানুষদের। তার ওপর গরম কাপড়ের অভাব তো রয়েছে। সব মিলিয়ে শীতের কারণে আমাদের খুব কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে।
মুজিব সড়কে ফল বিক্রেতা আলামিন হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক দিন ঠাণ্ডা কমে গিয়েছিল। একেবারে ঠান্ডা নেই বললেই চলে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু গত দুদিন ধরে প্রচণ্ড শীত পড়তে শুরু করেছে। যেমন কুয়াশা ঝরছে তেমন বাতাস বইছে। যার কারণে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। সকাল থেকে অনেক বেলা পর্যন্ত চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে থাকছে। সকালের দিকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। যার কারণে সড়কে কোনও কিছু দেখা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড শীত পড়ায় লোকজনও কম। দুপুরের পরে সূর্য উঠলেও তেমন তীব্রতা নাই।’
সোমবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীত জেঁকে বসায় অনেকেই বাড়ির সামনে অথবা রাস্তার পাশে খড়কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তাপ নিচ্ছেন। চুড়ামনকাটি গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও দেলোয়ার জানান-ঘরের মধ্যে শীত কিছুটা কম হলেও বাইরে হাড়কাঁপানো শীত। তাই কয়েকজন মিলে আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করছি। যশোর শহরের দড়াটানা, মুজিব সড়ক, এইচএমএম আলী সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়ার হকার্স মার্কেট, কালেক্টরেট মার্কেট ও জিলা পরিষদ মার্কেটের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। ভ্যান গাড়ি ও রাস্তার পাশের দোকানে নিম্ন আয়ের মানুষেরা সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, হুডি, গরম মোজা, উলের টুপি কিনছেন। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত তিন দিন ধরে শীতের তীব্রতা একটু বেশি। তাই শীতের কাপড় ক্রয়-বিক্রয় বেড়েছে। যশোর শহরতলী বাহাদুরপুর এলাকার ইমরান হাসান জানান- প্রচণ্ড শীতে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
সদরের পুলেরহাট গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, এমন শীত পড়তে থাকলে কৃষকের দুর্ভোগের শেষ নেই। কুয়াশায় ধানের চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খোলা মাঠের বাতাসে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। এদিকে শীতের প্রকোপের সাথেই বেশির ভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগে বাদ পড়ছে না বয়স্ক মানুষেরাও। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ অনেকটা বেড়েছে। বহির্বিভাগ থেকেও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শ’শ’ মানুষ চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, হাসপাতলে শীতজনিত রোগী বেড়েছে। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। রোগ প্রতি শিশুর প্রতি মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। গায়ে গরম কাপড় ছাড়াও হাত পায়ে মোজা পরাতে হবে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত থেকে কোনো বয়সের মানুষ ঝুঁকিমুক্ত নন। ফলে সকলকে সচেতন হতে হবে।

