কাজী নূর
সবজি থেকে শুরু করে মাছ মাংস ডিমের দাম কমতির দিকে থাকায় হাসি মুখে ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন ক্রেতা। তবে কমতির বাজার প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, এ লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী এবং সুখকর নয়। কারণ ভোক্তা অল্প টাকায় ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে ফিরলেও কৃষক কি নিয়ে ফিরছেন মাঠ থেকে সেটাও দেখতে হবে। তারা বলছেন এই সস্তা বাজারের কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠছে কি না খোঁজ নিন। কৃষক যদি আজ ঠকে যায়, তাহলে কাল তিনি চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এটা কৃষির জন্য ভালো কিছু নয়।
শুক্রবার যশোরের হাজী মোহাম্মদ মহসিন রোড বড়বাজার সরেজমিনে ঘুরে মিলেছে এসব তথ্য। বাজার ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ সবজি মানভেদে ১৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে বাঁধাকপি কেজি প্রতি ১৫ টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা, পেঁয়াজ কালি ২০ টাকা, শিম ২০ থেকে ৩০ টাকা, মুলো ২০ টাকা, ব্রোকলি ৪০ টাকা, মিচুড়ি ৪০ টাকা, মেটে আলু ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পালং শাক ৩০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, সবুজ শাক ২০ টাকা, বিটরুট ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, শালগম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ৪০ টাকা, কচুরমুখি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুরলতি ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, ঢেড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কুমড়ো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচকলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মানকচু ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, স্কোয়াশ ৫০ টাকা, কুশি ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মটরসুটি ১০০ টাকা, জলপাই ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া লাউ ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হয়েছে।
আরও পড়ুন .. ..
যশোরে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহের হানা,দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সে. রেকর্ড
আলাপকালে সবজি বিক্রেতা কৃষ্ণপদ কুন্ডু বলেন, ভোক্তা খুব সস্তায় ব্যাগ ভরে বাজার করছেন এটা সত্য। কিন্তু এত সস্তার বাজারে কৃষক বেঁচে আছে কি না, আদতে তার উৎপাদন খরচ উঠছে কি না এটি ভাববার বিষয়। দেখেন বাজারে ফুলকপি ২০ টাকা কেজি। মাঠ থেকে কৃষক সেটি বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৯ টাকায়। এ দামে কৃষকের খরচ উঠবার কথা নয়। তাই সবার আগে কৃষককে জেতাতে হবে বলে মনে করি।
শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা বিরামপুর নওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাধন কুমার দেবনাথ বলেন, সবজির বাজার খুবই সস্তা এতে আনন্দিত হবার কিছু নেই। কারণ কৃষক যদি ভালো থাকে তবেই আমাদের মতো ভোক্তাদের সুখ। তাই কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পায় সেদিকটাতেও রাষ্ট্রের নজর দিতে হবে। কৃষক যদি ভালো থাকে ভালো থাকবে বাংলাদেশ।
আলু, পেঁয়াজের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে নতুন আলু কেজি প্রতি ২০ টাকা, পুরনো আলু ১৭ থেকে ১৮ টাকা, নতুন পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও পুরনো পেঁয়াজ ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা আকরাম মোল্লা বলেন, বাজারে নতুন আলুর চাহিদা তুঙ্গে। নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলেও পুরনো পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে কেজি প্রতি ১ কেজি সাইজের রুই ২২০ টাকা, ৩ কেজি সাইজের কাতলা ৩৮০ টাকা, নাইলোটিকা ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, বাটা ১২০ টাকা, মায়া ৩৫০ টাকা, পারশে ৫০০ টাকা, শিং ৪০০ টাকা, পাঙাশ ১৭০ টাকা, কৈ ১৮০ টাকা, খলসে ৪০০ টাকা, ফলই ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, খয়রা ৪০০ টাকা, চাপলে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা, বেলে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ৫/৬ পিসে ১ কেজি ইলিশ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মাছ বিক্রেতা আলমগীর হেসেন বলেন, মাছের বাজার বেশ সস্তা। বিক্রি ভালো।
মুদিপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ভোজ্যতেল সয়াবিন ১৯২ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা লিটার, সরিষার তেল ২১০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি ও পাম ১৬৪ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এছাড়া আটা কেজি প্রতি ৪৫ টাকা, ময়দা ৫৫ টাকা, মোটা মসুরি ডাল ৯০ টাকা, দেশি মসুরির ডাল ১৭০ টাকা, মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোলার ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ৫৫ টাকা, সাদা চিনি ১০০ টাকা ও লাল চিনি ১৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
বড়বাজার হাটখোলা রোডের শ্যামা স্টোরের মালিক দুর্গা পাল বলেন, হঠাৎ দেশি মসুরির ডালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মশলা জাতীয় পণ্যের দাম রোজ লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ জাতীয় পণ্য ক্রেতারা ২০/১০ গ্রাম করে কেনে বিধায় দাম বৃদ্ধির বিষয়টি খুব একটা বোঝা যায় না। দুর্গা পাল আরো বলেন, মশলার দাম বৃদ্ধির লাগাম এখনই টেনে ধরা উচিত।
মুরগি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি ১৬০ টাকা, সোনালী মুরগি ২১০ থেকে ২৬০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
বিসমিল্লাহ ব্রয়লার হাউজের মালিক নুরুন্নবী হোসেন অন্তর বলেন, গোটা বাজারে একমাত্র আমার দোকানে কম লাভে মুরগি বিক্রি করছি। ইনশাআল্লাহ বিক্রি বেশ ভালো। পিকনিক, বিয়ে শাদির মৌসুম হওয়ায় বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে মুরগির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকার কথা জানিয়েছেন তিনি।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। মহিষের মাংস ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। তবে গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের অনেকেই বাজার প্রথার বাইরে গিয়ে ৬৫০ টাকা দরে মাংস বিক্রি করছেন।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে কেজি প্রতি বাসমতী চাল ৭৬ থেকে ৭৮ টাকা, সুপার মিনিকেট ৬১ থেকে ৬৪ টাকা, রড মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, জিরা মিনিকেট ৭৪ থেকে ৭৬ টাকা, আটাশ ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, সুবললতা ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
চাল বিক্রেতা ইসহাক ট্রেডার্স সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। চাল আমদানির ফলে সিণ্ডিকেট করে কেউ দাম বৃদ্ধি করতে পারেনি। আপাতত চালের দাম বৃদ্ধি কোন আশংকা নেই বলে জানান তারা।
ডিমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে পাইকারি হিসেবে লাল ডিম হালি প্রতি ৩২ টাকা, সাদা ডিম ৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ৬০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৭০ থেকে ৭২ টাকা ও কোয়েল পাখির ডিম ৮ টাকা বিক্রি হয়েছে।
অপরদিকে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাল ডিম হালি প্রতি ৪০ থেকে ৪২ টাকা বিক্রি হয়েছে। পাইকারি ও খুচরা দামের ফারাক প্রসঙ্গে জনৈক বিক্রেতা বলেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ডিমের দাম কম। আমরা নামি দামি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ডিম বিক্রি করি। যা গুণগত মান সম্পন্ন। তাই দাম একটু বেশি।

