নিজস্ব প্রতিবেদক
কৃষকের খেতের সবজির মূল্য আর বাজারের খুচরা দামের ফারাক আকাশ-পাতাল। ৮ কিলোমিটার দূরত্বে কোনো কোনো সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্চে ভোক্তার হাতে। বিশেষ করে হরতাল-অবরোধের অজুহাতে প্রান্তিক কৃষকদের ঠকাচ্ছেন পাইকার ব্যবসায়ীরা।
এতে ফঁড়িয়াদের পোয়া বারো। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সবজির মোকাম যশোরের সাতমাইল ও যশোর শহরের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য মিলেছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, হরতাল-অবরোধসহ নানা অজুহাতে তাদের সবজির ন্যায্য মূল্য দিচ্ছেন না ব্যাপারীরা। ফলে নিরুপায় হয়ে মোকামের ব্যাপারীদের কাছে কম দামে সবজি বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
গত রবিবার সাতমাইল সবজির মোকামে দেখা যায়, শীতকালীন সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজারে উঠেছে মূলা। পাশাপাশি ফুলকপি, পাতাকপি, শিম, পালংশাক, বেগুন, লাউ বেগুনসহ নানা সবজির সমারোহ।
যশোর সদর উপজেলার সাতমাইল এলাকার হরিপুর গ্রামের সোলাইমান মোল্লা ৮ মণ মূলা নিয়ে মোকামে আসেন। তিনি জানান, হাটে আসার পর ব্যাপারীরা তার মূলার সর্বোচ্চ দাম
বলেছে ৮ টাকা কেজি। বাধ্য হয়ে ওই দামে মূলা বিক্রি করে বাড়ি ফিরছি। অথচ যশোর শহরের বিভিন্ন বাজারে এই মূলা বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকা কেজি।
এছাড়াও এ মোকামে চাষিদের ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ২০/২৫ টাকা, পাতাকপি ১৫/১৬, পালংশাক ৭/ ৮ টাকা, বেগুন ১৮/২০ টাকা, প্রতি লাউ ১৫/১৮ টাকা।
অথচ যশোর শহরের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ফুল কপি ৪৫/৫০, পাতাকপি ২৫, পালংশাক ১৫, বেগুন ৪০/৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর লাউ প্রতিটি ২৫/৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে
ভোক্তাদের।
ঝনঝনিয়া গ্রাম থেকে ২ মণ পাতাকপি নিয়ে মোকামে আসেন কৃষক হামিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহ খানেক আগে পাতাকপির দাম ছিল কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ব্যাপারীরা নানা বৃষ্টি, হরতাল-অবরোধসহ নানা অজুহাতে ১৫/১৬ টাকা কেজি দরে আমাদের কাছ থেকে পাতাকপি ক্রয় করছে। এ ভাবে দাম চললে বিঘা প্রতি আমাদের ৮-১০ হাজার
টাকা লোকসান গুনতে হবে।
সাহবাসপুর গ্রামের কৃষক সেলিম হোসেন বলেন, মাঠ থেকে সবজি নিয়ে মোকামে গেলে নানা অজুহাতে দাম পাই না।
আমাদের চোখের সামনে ব্যাপারীরা কম দামে সবজি কিনে বেশি দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তার কাছে আরও বেশি দামে বিক্রি করেন। ফলে
কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। লাভবান হয় ফঁড়িয়া আর খুচরা ব্যবসায়ীরা। পকেট কাটে ভোক্তাদেরও।
বারীনগরের সবজি চাষি রুহুল আমিন বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব সবজির দাম কেজি প্রতি ১৫-২০ টাকা কমেছে।
লাউ, বেগুন, পাতাকফি, ফুলকপি সবকিছুর দাম কম। কৃষকদের শেষ করে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।
মরিচ চাষি মির্জাপুর গ্রামের রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমরা তো কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি।
কিন্তু খুচরা বাজারে গিয়ে দেখছি কাঁচামরিচের দাম প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা। তাহলে লস আমাদের হচ্ছে, আর হাতবদলের কারণে লাভ হচ্ছে ব্যাপারী এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের।’
এদিকে ব্যাপারীরা বলছেন, হরতাল-অবরোধে সবজিবাহী ট্রাক যশোর থেকে সবজি নিয়ে দূরের জেলা গুলোতে যেতে চায় না।
সেক্ষেত্রে তাদের ট্রাক ভাড়া ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি দেয়া লাগছে। একদিকে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া অন্যদিকে শীতকালীন সবরকমের সবজি বাজারে উঠে যাওয়ায় সবজির দাম কমেছে।
সাতমাইল সবজির মোকামের ব্যাপারী তুহিন হোসেন বলেন, বগুড়া ও ঈশ্বরদীর মূলা এখন বাজারে। এজন্য যশোর অঞ্চলের উৎপাদিত মূলার দাম কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় মূলার দাম ১৫-২০ টাকা কমেছে।
আর এক ব্যাপারী দেলোয়ার রহমান বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে ট্রাকওয়ালারা সবজি নিয়ে যেতে চায় না। বেশি ভাড়া চায়। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় আমাদের কম দামে সবজি কিনতে হচ্ছে।
পলাশ হাসান নামে আরেক ব্যাপারী বলেন, পরিবহন খরচ এখন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি লাগছে। খরচ পোষাতে সবজি কিনতে হচ্ছে। তা বাদে এখন সবরকমের শীতকালীন সবজি বাজারে ভরপুর উঠে যাওয়ায় সবরকম সবজির দাম কমেছে।
যশোরের বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী প্রদীপ বিশ^াস জানান, ‘আমরা আড়ৎ থেকে মাল কিনি। যেরকম দামে কিনি, তার থেকে একটু বেশি দামে বিক্রি করি। আড়তে দাম কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করি।
এদিকে যশোরের বড় বাজারের আড়ৎদার আলমগীর হোসেন বলেন, পাইকার ব্যবসায়ীরা পণ্যের রেট দিয়ে দেন। আমরা মণ প্রতি একটা কমিশন পায়। আমাদের ঘর-শ্রমিক ব্যয় বাবদ কমিশন নিয়ে থাকি।
শিরোনাম:
- সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
- যশোর মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন সংস্কার ও উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে ২৭টি মনোনয়নপত্র ক্রয়
- ‘জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসায় অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না’
- পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কোচ সংকটে শিগগিরই চালু হচ্ছে না ট্রেন চলাচল
- শব্দ থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী; যশোরে তিনদিনের নাট্য উৎসব হবে
- অভয়নগরে রবিউল হত্যা ওয়াহিদুলের রিমান্ড মঞ্জুর
- যশোর চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মিজান খান ও সম্পাদক সোহান নির্বাচিত
- কেশবপুরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কুরআন ধরানো অনুষ্ঠান ও পরিচিত সভা