রাজগঞ্জ প্রতিনিধি
মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ অঞ্চলের পেঁয়াজের চারা উৎপাদনে এখন ব্যস্ত কৃষকরা। গত মৌসুমের শেষদিকে এসে পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ায় তারা বিজায় খুশি। এ বছরে নতুন পেঁয়াজ চাষের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন কৃষকরা।
মনিরামপুর উপজেলা চালুয়াহাটি ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী ফারহানা ফেরদৌস বলেন, রাজগঞ্জ অঞ্চলে এবার, কাট পেঁয়াজ ও চারা পেঁয়াজ মিলিয়ে দুই হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চাষিরা দুটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করেন। এর একটি কাট পেঁয়াজ, অন্যটি চারা। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে কাট পেয়াজ ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হাটে উঠতে শুরু করে। আর চারা পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজ মার্চ-এপ্রিলে মাঝামাঝি থেকে ওঠা শুরু করে।
আমন ধান কাটার পরপরই দ্রুত চাষ দিয়ে জমিতে বিজতলা তৈরি করা হয়েছে। চাষির পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ, পেঁয়াজের মাঠে কাজ করছে এখন। বাড়ির নারীরাও পুরুষ সদস্যদের কাজে সহায়তা করছেন মাঠে। চাষিরা চারা পেঁয়াজ চাষের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করছেন, কেউবা বীজ বপণ করছেন। আর যারা একটু আগে বীজ বুনেছেন তারা চারা পেঁয়াজের যত্ন পরিচর্যায় ব্যস্ত। চাষির সাথে সাথে জমি চাষ দেয়া ট্রাক্টর মালিকরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। আটঘরা গ্রামের নিজামুদ্দিন, রুহুল আমিন বলেন, জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে শুরুতেই পেঁয়াজ বিজ কেনা, চারা উৎপাদনের জন্য বিজতলা ভাল করে পরিস্কার করতে হয়। জমি চাষ সেচ, সার, গোবর, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলন খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এর পাশাপাশি যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন তাদের বিঘা প্রতি বাৎসরিক ২০ হাজার টাকা লিজমানি জমি মালিককে দেন। এ জন্য তাদের খরচ হয় আরো বেশি। এছাড়া অনেক ছোট-বড় চাষি চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পেঁয়াজসহ চাষ করেন। আব্দুর রশিদ বলেন, পৈত্রিক পেশা কৃষি তাই অনেক কষ্ট সত্ত্বেও এটা তারা ধরে রেখেছেন। চাষি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পেঁয়াজ চাষ অনেক পরিশ্রমের। আবার চাষ করতে খরচ সার-বিষের দাম বেড়ে গেছে, কিন্তু পেঁয়াজের দাম সে তুলনায় বেড়েছে অনেক। মৌসুমে পেঁয়াজের নায্যদাম নিশ্চিত করার জন্য। সারের, বিষের, তেলের দাম বাড়ে তখন কোনো আন্দোলন হয় না, কিন্তু পেঁয়াজের দাম একটু বাড়লেই শোরগোল শুরু হয়ে যায়। আটঘরা গ্রামের ট্রাক্টর মালিকেরাও বলেন, তার এখন চরম ব্যস্ত। জমি চাষ করার জন্য চাষিদের সিরিয়াল পড়ে গেছে, তিনি আরও বলেন, এক-দুই চাষে রেট কম-বেশি আছে। দুই চাষ দিতে বিঘা প্রতি নিচ্ছেন, ছোট ট্রাক্টর এক হাজার দুইশত টাকা। আরেক ট্রাক্টর মালিক বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ বিঘা জমি চাষ করি।
নেংগুড়াহাটে সবচেয়ে বড় সার ও কীটনাশকের দোকানে সবুজ ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজ চাষিদের এখন দোকানে আসা বেশির ভাগ পেঁয়াজ চাষিরা বলেজানাই। দোকানের ম্যানেজার বলেন, পেঁয়াজ চাষ প্রধান এলাকা মণিরামপুর উপজেলা আটঘরা গ্রাম বলধালী বিল পাড়ের চাষিরা। পেঁয়াজ চাষী আবু সাঈদ, আজিজুর রহমান ও সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়লে জমির বার্ষিক লিজের টাকাও বাড়ে। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বলধালী বিলপাড়সহ জমিতে বাৎসরিক লিজের টাকা এ বছর প্রায় ২০ হাজার। এর সাথে রয়েছে উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি ৩০ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, এক বিঘা পেঁয়াজের গড় ফলন হয় ৪০ থেকে ৫০ মণ। সে হিসেবে, দুই হাজার বা ২৫০০ শত টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলে চাষির উৎপাদন খরচ ওঠে না। মৌসুমে অন্তত ৩ হাজার টাকা মণ দর থাকলে চাষিরা লাভবান হতে পারেন। আটঘরা গ্রামের মাসুদুর রহমান ও আব্দুর রশিদ বলেন, তারা অন্যের জমি বাৎসরিক লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেন। পেঁয়াজ চাষ করে কোনো বছর লাভ আবার কোনো বছর ক্ষতি হয়। তিনি বলেন,ক্ষতি হলে বছরে অন্য দুটি ফসল চাষ করে তারা সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে বীজ উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এবছর পেঁয়াজের বীজ গতবারের চেয়ে এবার একটু বেশি পাওয়া গেছে। এবার ৪হাজার থেকে ৫হাজার টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হয়েছে। গত বছর প্রতিকেজি বীজ ৩থেকে ৪হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। উপজেলা চালুয়াহাটি ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী মারুফুল হক ও হাবিবুর রহমান বলেন, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে উৎপাদনও বাড়ছে। উন্নত জাতও উদ্ভাবিত হয়েছে। তবে সেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। চাষি পর্যায়ে পৌঁছাতে সঙ্গত কারণেই সময় লেগে যায়। তিনি আরও বলেন,গত মৌসুমের শেষ দিকে এসে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন। এজন্য চাষিরা পেঁয়াজ চাষে এবার আগ্রহী হয়ে উঠেছ।
শিরোনাম:
- মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বে দুই দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি
- পদ্মাসেতুর ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের দিন বিক্ষোভ করবে যশোরবাসী!
- যশোরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, পাঠদান ব্যাহত
- যশোর শহরের দড়াটানা ও ঢাকা ব্রিজ এলাকায় ভৈরব নদে ভয়াবহ পানি দূষণ
- যশোরে নাশকতা মামলায় ১২৫ নেতাকর্মী কারাগারে, আদালত চত্বরে স্লোগানে উত্তাল
- ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
- মৌ হিজড়ার স্বর্ণালংকার ও মালামাল আত্মসাত, দায়ীদের শাস্তির দাবি
- গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জেকে বসেছে শীত