নিজস্ব প্রতিবেদক
আজকে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি আসনে ৩২ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর ১১ জন ছাড়া অনন্য ২১ জন প্রার্থী সব ভোট কক্ষ বা বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে পারেন নি। সকল কেন্দ্রের সব ভোট কক্ষে পোলিং এজেন্টের তালিকা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রতীকের ৬ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র ৭ আওয়ামী লীগ নেতা। বাকি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা অল্প কিছু সংখ্যক ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেয়ার তালিকা প্রস্তুত করেছেন। তবে নাগরিক সমাজের নেতা এবং রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোলিং এজেন্টের সংখ্যা দেখেই প্রার্থীদের সামর্থ্য ও ভোটের ফলাফল কোন দিকে যাচ্ছে তা ধারণা করা যায়।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে ১০২টি কেন্দ্রে ভোট কক্ষ রয়েছে ৬৬১টি। এ আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন, স্বতন্ত্র ট্রাকের প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন সব কক্ষে পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ শতভাগ কেন্দ্রে এজেন্ট দিলেও নৌকার কর্মীরা তার পোলিং এজেন্টদের হুমকি দিচ্ছে। আর জাতীয় পার্টির আক্তারুজ্জামান সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন না বলে জানান।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসনে ১৭৬টি কেন্দ্রে ভোট কক্ষ রয়েছে ৯৪৫টি। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম শতভাগ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন। আর জাতীয় পার্টির ফিরোজ শাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আব্দুল আওয়াল, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর শামছুল হক সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন না। স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী এসএম হাবিবুর রহমান সম্প্রতি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য নির্বাচনী ব্যালটে তার প্রতীক থাকছে।
যশোর-৩ (সদর) আসনে ১৯৮টি কেন্দ্রে ভোট কক্ষ রয়েছে এক হাজার ৩৮৬টি। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাজী নাবিল আহমেদ, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহিত কুমার নাথ শতভাগ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন। এই আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মারুফ হাসান কাজল, জাতীয় পার্টির মাহবুব আলম বাচ্চু, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির অ্যাড. সুমন কুমার রায়, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. তৌহিদুজ্জামান, তূণমূল বিএনপি মো. কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শেখ নুরুজ্জামান সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন না।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) আসনে ২০৬টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ রয়েছে এক হাজার ২৬৯টি। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বাবুলই শতভাগ পোলিং এজেন্ট দিতে পেরেছেন। তৃণমূল বিএনপির লে.ক. (অবসরপ্রাপ্ত) এম শাব্বির আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের ইউনুস আলী ও জাতীয় পার্টির জহুরুল হক শতভাগ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন না। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য রনজিত রায় ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সুকৃতি কুমার মন্ডল সম্প্রতি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ব্যালট পেপারে তাদের প্রতীক থাকছে।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে ১২৮টি ভোট কেন্দ্রে ৭৯০টি ভোট কক্ষ রয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলী শতভাগ পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন। আর ইসলামী ঐক্যজোটের হাফেজ মাওলানা নুরুল্লাহ আব্বাসী সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন না। এছাড়া তৃণমূল বিএনপির আবু নসর মোহাম্মদ মোস্তফা ও জাতীয় পার্টির এমএ হালিম ভোট গ্রহণের দুইদিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে ৮১টি ভোট কেন্দ্রে ৫০৮টি ভোট কক্ষ রয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার, কাচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচএম আমির হোসেন ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল ইসলাম শতভাগ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিচ্ছেন। তবে জাতীয় পার্টির জিএম হাসান মোট কেন্দ্রের ৪০ শতাংশ ভোট কক্ষে পোলিং এজেন্ট দিয়েছেন।
যশোর-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আক্তারুজ্জামান বলেন, সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে পারিনি। দিয়েও কি লাভ; স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা আওয়ামী লীগের ভয়ে থাকতে পারবে না। যশোর-২ আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেসের আব্দুল আওয়াল বলেন, ৫০ শতাংশ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে পেরেছি। কংগ্রেস তো ছোট দল; দলের কর্মী সমর্থক বেশি না। তাই পোলিং এজেন্ট সংকটে রয়েছি। যশোর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মাহবুব আলম বাচ্চু বলেন, মোট কেন্দ্রের ৮০ শতাংশ পোলিং এজেন্ট দিতে পেরেছি। এই আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিটি কক্ষে দিতে না পারলেও প্রতিটি কেন্দ্রে দেয়ার চেষ্টা করছি। আসলেই তৃণমূল বিএনপি নতুন দল। নতুন দল হিসাবে কর্মী সমর্থক কম। তাই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলী বলেন, ‘সব কয়টি কক্ষে পোলিং এজেন্ট দিলেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকরা আমার এজেন্টেদের হুমকি দিচ্ছে। যদিও এই অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য।
যশোর সদরের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহিত কুমার নাথ বলেন, নৌকা প্রতীকের কর্মীরা আমার এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি হুমকি দিচ্ছে। এসব বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগও দিয়েছি।
সচেতন নাগরিক কমিটি যশোরের সভাপতি অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল বলেন, এবারের নির্বাচনে যেসব দল অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে আ.লীগ ছাড়া কারো জনসমর্থন নেই বললেই চলে। কিছু দল রয়েছে নামসর্বস্ব। ওই সব দলের নেতা-কর্মীদের কেউ চেনেনা। যেকারণে তারা পোলিং এজেন্ট দেবার মতো সক্ষমতা হারিয়েছে। একই সাথে অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্যান্য দল অংশ না নেয়ায় নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। কেননা জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বেছে নেবার সুযোগ পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ বনাম তাদেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভোট হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পোলিং এজেন্টের সংখ্যা দেখেই প্রার্থীদের সামর্থ্য ও ভোটের ফলাফল কোন দিকে যাচ্ছে তা ধারণা করা যায়। যশোরে যেসব দল নির্বাচন করছে তার বেশিরভাগই অপরিচিত এবং প্রার্থীরাও অপরিচিত মুখ। পোলিং এজেন্ট দিতে যে কর্মী সমর্থক ও অর্থের প্রয়োজন তা অনেকেরই নেই।