কেশবপুর প্রতিনিধি
আমন ধান শূন্য যশোরের কেশবপুরের বাজার। মজুদদারদের সিন্ডিকেটের কারণে উপজেলার কোথাও মিলছে না আমন ধান। যে কারণে সরকারিভাবে সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হতে চলেছে।
অবশ্য উপজেলা খাদ্য বিভাগের দাবি সরকারি মূল্য থেকে বাজার দর বেশি হওয়ায় কৃষক ও হাসকিং মিল মালিকরা খাদ্য গুদামে ধান, চাল সরবরাহ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় ৮ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়। যা থেকে ৪৬ হাজার ৪৪৫ টন ধান উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। তারপরও সরকারিভাবে হাসকিং মিল মালিকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৪৪ টাকা দরে ৩২৫ টন চাল ও কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৩০ টাকা মূল্যে ৩৩৭ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ধানের অভাবে খাদ্য গুদামের সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হতে চলেছে।
জানা গেছে, অধিক মুনাফার আশায় বিভিন্ন জেলার অটোরাইস মিল মালিকরা তাদের চাহিদার থেকে তিনগুণ বেশি ধান মজুদ করে। এ কারণে তারা বিভিন্ন উপজেলার হাট বাজারের ধান, চাল ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখে। এসব ব্যবসায়ীরা আমন ধান ওঠার সাথে সাথেই কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি মূল্য থেকে বেশি দরে ধান কিনে মজুদ করে। পরবর্তীতে তারা আরও লাভের আশায় ওইসব অটো রাইস মিল মালিকদের কাছে মজুদ করা ধান বিক্রি করে থাকে। যে কারণে কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করছে না। অপরদিকে বাজারে ধান না পাওয়ায় হাসকিং মিল মালিকরা সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারছেন না। বর্তমান কেশবপুরে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্র জানায়, ফুড লাইসেন্স ছাড়া কেউ ধান-চালের অবৈধ মজুদ বা ব্যবসা করতে পারবে না। কেশবপুরে ক্ষুদ্র ফুড লাইসেন্স ৪১টি ও বড় ফুড লাইসেন্স রয়েছে ৩টি। ক্ষুদ্র লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা চাল ১০ টন, ধান ১০ টন ও গম ১০ টন মজুদ করতে পারবে। আর বড় ফুড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা ধান, চাল, ও গম মিলে ১৫০ টন মজুদ করতে পারবে। নিয়মানুযায়ী ৭ দিন অন্তর অন্তর ফুড ব্যবসায়ীদের ধান, চাল ও গম মজুদের বিবরণ খাদ্য বিভাগে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো ব্যবসায়ী এ নিয়ম মানে না। এ ব্যাপারে কেশবপুরের খাদ্য বিভাগ রয়েছে একেবারেই উদাসীন।
যদিও ইতিমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হাট বাজারে অতিরিক্ত ধান, চাল মুজদকারীদের সন্ধানে নেমেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগও অনুরূপভাবে মাঠে নামলেও কোনো মজুদদারের সন্ধান করতে পারেনি।
উপজেলার কাস্তা গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার এবার আমন মৌসুমে ৭ বিঘা জমিতে চাষ করে ১৭৫ মণ ধান পেয়েছেন। পরিবারের খাওয়ার জন্য ২৫ মণ ধান রেখে ১৫০ মণ ধান বাজারে বিক্রি করেছেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আকতার বলেন, কৃষি বিভাগের দায়িত্ব হলো কৃষককে পরামর্শ দিয়ে বেশি ফসল উৎপাদন এবং পোকা মাকড় থেকে ফসল রক্ষা করা। উপজেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত কৃষকরাই কেবল খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করতে পারবে। যেখানে বেশি দাম পাবে কৃষক সেখানেই ধান বিক্রি করবে। তবে উৎপাদনের পর কৃষক কোথায় বিক্রি করবে না করবে এবং কারা মজুত করছে এটা দেখভালের দায়িত্ব কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শামীম হাসান বলেন, খোলা বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক এবং হাসকিং মিল মালিকরা খাদ্য গুদামে ধান চাল সরবরাহ করছে না। মিল মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে যাতে তারা তাদের চুক্তিবদ্ধ অনুযায়ী চাল সরবরাহ করে। তবে মজুদদারদের সন্ধানে কাজ করায় কিছু কিছু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে তাদের মজুদ করা ধান চালের কথা জানিয়েছে। এ পর্যন্ত কেশবপুর খাদ্য গুদাম কৃষকদের কাছ থেকে ১০ টন ধান ও মিল মালিকদের নিকট থেকে ২২২ টন চাল ক্রয় করেছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুহিন হোসেন জানান, যৌথভাবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও মজুদদাদের সন্ধানে কাজ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে ধান, চাল সংগ্রহ যাতে সফল হয় সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।
শিরোনাম:
- আলুর দাম লাগামহীন ভোক্তার নাভিশ্বাস
- শীতে ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রির ধুম
- একটা সংস্কার কমিটি দিয়ে সংবিধান সংস্কার সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
- নিখোঁজের ৩ দিন পর কপোতাক্ষ নদে মিলল বৃদ্ধার মরদেহ
- কৃষ্ণনগরে আরাফাত কোকো স্মৃতি ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন রতনপুর
- পাখির সাথে মানুষের ভালোবাসার গল্প !
- সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
- যশোর মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন সংস্কার ও উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে ২৭টি মনোনয়নপত্র ক্রয়