বিবি প্রতিবেদক
মাদক কারবারিকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে যশোরে আত্মীয়কে রক্ষা করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে সোলায়মান হোসেন (৩৫) নিহত হয়েছেন। ছুরিকাঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন জসিম সিকদার নামে আরেকজন। গতকাল সন্ধ্যায় শহরের টিবি ক্লিনিক মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে জসিম সিকদার পুলিশকে তথ্য দিয়ে একই এলাকায় শহিদুল ও শাহিন নামে দুই মাদক কারবারিকে আটক করিয়ে দেয়ার অভিযোগে এদিন তার উপর হামলা চালায় ওই দুর্বৃত্তরা।
নিহত সোলায়মান হোসেন এবং আহত জসিম সিকদার টিবি ক্লিনিক মোড়ের বাসিন্দা। সোলায়মান জেস ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের সাবেক ম্যানেজার।
নিহতের ভগ্নিপতি এবং আহত জসিম সিকদারের ভাই আলমগীর হোসেন আলম জানান, টিবি ক্লিনিক এলাকায় নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করেন তার ভাই জসিম সিকদার। একই এলাকার আরাফাত, সিরাজুল, শরীফ, সুজন, মেহেদী, শহিদুল ও শাহিন দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা, ফেরসিডিলসহ নানা ধরনের মাদকের কারবার করে আসছে। নৈশপ্রহরী জসিম সিকদার তাদের মাদক সেবন ও বিক্রিতে নিষেধ করেন। এতে তারা জসিমের উপর ক্ষিপ্ত হয়। গত মঙ্গলবার কোতোয়ালি থানার এএসআই টমাস মণ্ডলের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শহিদুল ইসলাম ও শাহিনকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৪শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশ ১৩০ পিস ইয়াবা দিয়ে ওই দুইজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। এ বিষয়ে জসিম সিকদার ২০ হাজার টাকা সোর্স মানি পেয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু শহিদুল ও শাহিনকে কেন পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের সাড়ে ৪শ’ পিস ইয়াবার টাকা ফেরত দাবি করে মাদক কারবারিরা। এ সময় জসিম সিকদারের কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা তারা নিয়ে নেয়। এরপরও বাকি ইয়াবার টাকার জন্য জসিমকে তারা খুন করতে বার্মিজ চাকু দিয়ে আঘাত করে। এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত থাকা সোলায়মান হোসেন ঠেকাতে গেলে তাকেও এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা সোলায়মান হোসেন ও জসিম সিকদারকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেল কর্তব্যরত চিকিৎসক আসিফ মোহাম্মদ আলী হাসান তাকে মৃত ঘোষণা করে।
নিহতের স্ত্রী আসমা খাতুন বলেছেন, তার স্বামী জেএস ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসে চাকরি করতেন। এলাকার আরাফাত, সিরাজুল, শরীফ, সুজন, মেহেদী, শহিদুল ও শাহিন দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা, ফেরসিডিলসহ নানা ধরনের মাদকের কারবার করে এবং সেবন করে আসছে। আর এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার শহিদুল ও শাহিন ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়। আটক দুইজনের সহযোগি আরাফাত, সিরাজুল, শরীফ, সুজন, মেহেদী গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে টিবি ক্লিনিক মোড়ে আসে। এ সময় কেন পুলিশকে তথ্য দিয়ে শহিদুল ও শাহিনকে আটক করানো হয়েছে জানতে চায় জসিম সিকদারের কাছে। এবং জসিমের কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা এরই মধ্যে ওই দুর্বৃত্তরা নিয়ে নেয়। সাথে সাথে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, আহত জসিম সিকদার পুলিশের সোর্সের কাজ করে বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। কারণে অকারণে পুলিশ দিয়ে মানুষকে হয়রানির কারণে তার বিরুদ্ধে অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আর তাই গত মঙ্গলবার শহিদুল ও শাহিনকে আটকের বিষয়েও জসিমকে সন্দেহ করা হয়েছে।
এই খবর পেয়ে হাসপাতালে হাজির হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল জুয়েল ইসরান, কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশ হাসপাতাল মর্গে ছিল।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসিফ মোহাম্মদ আলী হাসান বলেছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সোলায়মানের মৃত্যু হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সোলায়মান হোসেন নিহতের ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবার এখনও থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি। পাশাপাশি খুনিদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেছেন, ঘটনার পরই হাসপাতাল এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতদের প্রাথমিকভাবে নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।