বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের মণিরামপুরে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তরটি লোকবল সংকটে ভুগছে। এই দপ্তরে বর্তমানে একজন অফিস সহায়ক ছাড়া কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই দপ্তর খোলা থাকলেও কার্যত এখানে কোন সেবা মিলছে না মাছ চাষিদের। উপজেলা মৎস্য দপ্তরে জ্যেষ্ঠ মৎস কর্মকর্তা, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা, ক্ষেত্র সহকারী, অফিস সহকারী ও অফিস সহায়কের পাঁচটি পদ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দপ্তরে দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান রেজা একমাস আগে বদলি হয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় যোগদান করেছেন। এরপর নতুন কাউকে এখানে পদায়ন করা হয়নি। পাশ্ববর্তী অভয়নগর উপজেলার জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হককে মনিরামপুরে বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিশেষ কাজ ছাড়া তিনি মণিরামপুরে আসেন না। এই দপ্তরে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ও ক্ষেত্র সহকারীর পদ খালি রয়েছে প্রায় দুই বছর। আর অফিস সহকারী নেই আট থেকে নয় মাস।
উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্র মতে, ৪৪৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বৃহত্তর এই উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৩টি নদ ও ৫টি বাঁওড় রয়েছে। ২৫টি খাল বিলের পাশাপাশি এখানে ১১ হাজার ৬৪৩টি পুকুর ও চার হাজার ৮১০টি মাছের ঘের রয়েছে। যেখানে পাঙ্গাশ, পাবদা, শিং, বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের পাশাপাশি দুই হাজার ৫৮৫ ঘেরে গলদা ও ৭৫টি ঘেরে বাগদা চিংড়ির চাষ হচ্ছে।
উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার মৎস্য চাষি বছরে ৪৮ হাজার ৯৩ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন করেন। যা স্থানীয় চাহিদার তুলনায় ৩৬ হাজার মেট্রিকটন বেশি। সূত্রটি বলছে, জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় মাছ চাষিরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাচ্ছেন না। সেবা নিতে দপ্তরে এসে তাদের খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে ঘেরে মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরেজমিন ঘের পরিদর্শন করে চাষিদের কার্যকরী পরামর্শ দেন। যা ক্ষতির হাত থেকে চাষিদের রক্ষা করে। নদী বা খালে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাটা দিয়ে মাছ আটকে রেখে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করেন। বাজারে মেয়াদ উত্তীর্ণ মাছের খাদ্য বিক্রি হয়। অনেক ব্যবসায়ী দপ্তরের নিবন্ধন না নিয়ে মাছের খাদ্য বিক্রি করেন। মাছের ঘেরে মুরগির নিষিদ্ধ বিষ্ঠা ছড়ানো হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসব বিষয় উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অপরাধীদের নিবৃত্ত করে থাকেন। মণিরামপুরে মৎস্য কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় এসব কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।
অফিস সহায়ক নূরুল ইসলাম বলেন, আমি ছাড়া দপ্তরে রাজস্ব খাতের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে কর্মরত নেই। একটি প্রকল্পে মেরিন ফিসারিজ কর্মকর্তা পদে তহমিনা সিদ্দিকা ও আল-আমিন নামে তাঁর একজন সহকারী আছেন। তাঁদের প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের নভেম্বর মাসে শেষ হবে।
তিনি বলেন, অভয়নগর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বিশেষ কাজ ছাড়া আসেন না। আমি সকালে এসে দপ্তর খুলে বসে থাকি আর সময় শেষে বন্ধ করি। মাছ চাষিরা সেবা নিতে আসলে বলি, দপ্তরে পরামর্শ দেয়ার মত কেউ নেই। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মৎস্য কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সাথে মাছ চাষিদের যোগাযোগ করতে বলি।
নূরুল ইসলাম আরও বলেন, রেজা স্যার যখন ছিলেন তখন আমি ছাড়া অন্য তিন পদও খালি ছিল। স্যারকে একা বাইরের কাজের পাশাপাশি অফিসের অন্য সব কাজ সামলাতে হতো।
উপজেলার ভরতপুর গ্রামের মাছ চাষি আখতারুজ্জামান সোহাগ বলেন, আমার পাঁচ বিঘা ঘেরে গলদা, পাবদা ও সাদা মাছের চাষ আছে। উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শে চাষ করছি। মণিরামপুরে বর্তমানে এই পদে কোন কর্মকর্তার নিয়োগ নেই। অতিরিক্ত দায়িত্বে যিনি আছেন মোবাইলে তার পরামর্শ নিই। কিন্তু জরুরি মুহূর্তে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা মৎস্য কর্মকর্তার অভাব বোধ করছি।
মণিরামপুরে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, আমার মূল দায়িত্ব অভয়নগরে। বিশেষ কাজ থাকলে মণিরামপুরে যাই। মাছ চাষিরা মোবাইলে যোগাযোগ করে পরামর্শ নেন।
যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, মণিরামপুরে লোকবল সংকটের কথা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। দ্রুত সংকটের সমাধান হবে বলে আশা করছি।