বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের বেজিয়াতলা ও নগর গ্রামের বাসিন্দা শিয়া মুসলমান (কনভার্টেড) সম্প্রদায়ের ২৫০ পরিবারকে সহায়তার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে উপকারভোগীদের কাছ থেকে অন্তত ৫০ লাখ টাকা আদায় করেছে তারা। উপকারভোগীদের তিন কক্ষের পাকা বাড়ি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা, প্রতিমাসে তিন হাজার টাকার খাদ্য পণ্য দেয়ার কথা বলে ১০ হাজার টাকা ও মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেয়ার কথা বলে এক লাখ টাকা করে আদায় করেছে। সরকার স্বীকৃত কোন প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রতারণা শংকা রয়েছে।
জানা যায়, ২০২৩ সালের জুন মাসে যশোরের ঝিকরগাছার বেজিয়াতলা ও নগর গ্রামের বাসিন্দা শিয়া মুসলমান (কনভার্টেড) সম্প্রদায়ের ২৫০ মানুষকে সহায়তা করার লক্ষ্যে অর্থ আদায় করে শিয়া সম্প্রদায়ের এক দল ব্যক্তি। এর মধ্যে ৪০টি পরিবারকে তিন কক্ষের পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা করে মোট ১২ লাখ টাকা আদায় করেছে। ২৫০টি পরিবারকে প্রতিমাসে ২৫ কেজি চাল, চার কেজি আটা, তিন লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি ডাল এবং চার কেজি আলু খাদ্য সহায়তার কথা বলে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করেছে। এছাড়া প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেয়ার কথা বলে অন্তত ৮ জনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে আদায় করেছেন। এসব লেনদেনে তারা কোনও ডকুমেন্ট ব্যবহার করছেন না। সম্পূর্ণ মুখের কথার ওপর ভিত্তি করে লাখ লাখ টাকার লেনদেন চলছে।
পানিসারা ইউনিয়নের নগর গ্রামের গৃহবধূ শিউলি বেগম বলেন, ‘আমি চাল-ডালের দুটি এবং একটি বাড়ির জন্য মোট ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। গত তিন মাস ধরে চাল-ডাল-তেল ইত্যাদি পেয়ে আসছি। তারা বলেছেন, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে চলছে, তাতে ভালো মনে হচ্ছে। যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে তো আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। সে কারণে আশঙ্কা থেকেই যায়।’
বেজিয়াতলা গ্রামের বর্গা চাষি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। এলাকার অনেকে চাল-ডালের জন্য ১০ হাজার করে টাকা জমা দিয়েছে। আমি চার মাস ধরে চাল-ডাল, তেলসহ ছয়টি আইটেম পাচ্ছি। এসব মালের বাজার মূল্য প্রায় তিন হাজার টাকা।’
একই এলাকার গৃহবধূ ফিরোজা বেগম বলেন, ‘শিয়া মতাবলম্বী শার্শা উপজেলার স্বরূপদহ গ্রামের রফিকুল ইসলাম আমাদের এলাকায় তিন ধরনের কর্মসূচি শুরু করেছেন। চাল-ডাল-তেল, ঘর ও মাসে নগদ টাকার পাশাপাশি শুনছি নতুন আরেকটি প্রজেক্ট শুরু করেছেন। সেটি হচ্ছে ১০ হাজার টাকায় এরপর থেকে চাল-ডাল তেল বাদে বিকাশে নগদ দুই হাজার করে টাকা দেবেন।’
বেজিয়াতলা গ্রামের আরেক গৃহবধূ ঝরনা বেগম বলেন, নিজের জন্য একটি এবং পাশের গ্রামে থাকা তার দুই ভাইয়ের জন্য দুটি ঘরের জন্য মোট ৯০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই তাদের কাছে টাকা দিয়েছি। এজন্য তারা কোনও কাগজপত্র দেয়নি।’
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোনও সচেতন নাগরিক কখনও এ ধরনের লেনদেনে বিশ্বাস করবে না। যেখানে ব্যাংক ১০ শতাংশ লাভ দিতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বিনা ডকুমেন্টে তারা কিভাবে প্রতি লাখে মাসে ২০ হাজার টাকা দেবে। এসব ঘটনায় এলাকার লোকজন প্রতারণার শিকার হবেন, এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শার স্বরুপ গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বর রফিকুল ইসলাম বলেন, শিয়া অনুসারী পরিবারের সহায়তার জন্য আমরা কয়েকজন দাতা মিলে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছি। আমাদের প্রকল্পের আওতায় বেজিয়াতলা ও নগর গ্রামের ২৫০টি পরিবারকে বাড়ি, খাদ্য সহায়তা ও ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে ৭ মাস ধরে খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে পরিবারগুলো। কিন্তু বাড়ি নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় উপকারভোগীদের টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মানুষের উপকার করার উদ্দেশ্যেই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতারণার অভিযোগ সঠিক নয়।
তিনি আরও জানান, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। শিগগিরই সরকারের কাছ থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিবেন। সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
শিয়াদের যশোরের সংগঠন ইনকিলাব মাহাদি মিশনের পরিচালক ঐতিহাসিক যশোর মুড়লীর ইমাম বাড়ার সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘এসব কাজের সঙ্গে শিয়া সম্প্রদায়ের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। ব্যক্তিগতভাবে এই কাজ করছেন রফিকুল ইসলাম। রফিকুলকে প্রশ্রয় দেয়া কখনও উচিত হবে না।’