বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামের বিশেষ অভিযানে যশোরে আওয়ামী লীগের ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে যশোর জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আটকদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। আটকদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতে পাঠালে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের ঘোপ এলাকা থেকে যশোর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম ইউসুফ শাহিদকে আটক করে পুলিশ।
আরও পড়ুন .. .. যশোরে দুই দিনে ১১ প্রার্থীর মনোনয়ন সংগ্রহ, প্রার্থীদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের সংশয়
তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইউসুফ ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। বিএনপির দলীয় কার্যালয় পোড়ানোর মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আকুল হোসাইনকে শহরের রায়পাড়া এলাকায় তার শ্বশুড় বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তিনি বেনাপোলের ঘিবা গ্রামের বাসিন্দা।
রাতেই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আকুল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সীমান্তে অস্ত্র, মাদক চোরাচালান কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এর আগে ২০২১ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের তিনটি দল মিরপুর, দারুস সালাম ও গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আকুল ও তার চার সহযোগীকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ৮টি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগজিন ও ৮টি গুলি ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় মামলাও হয়। সম্প্রতি ওই মামলায় জামিনে বের হন তিনি। এদিকে, যশোরের চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি মাসুদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে ও কয়েকটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবি পুলিশের ওসি মোহাম্মদ আলী।
পুলিশ সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে অস্ত্রের মহড়ায় তিনি উপজেলার রাজপথ দখলে নিয়ে আন্দোলন দমনের সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। মাসুদ চৌধুরির নির্দেশে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা উপজেলা ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেন। এছাড়াও মেহেদি মাসুদ চৌধুরি যশোর জেলা বিএনপির অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনার আসামি।
তিনি শাখারীগাতী গ্রামের বাসিন্দা। নিজ এলাকা থেকে বুধবার রাতে তাকে আটক করা হয়। এছাড়া কোতয়ালী মডেল থানায় ৩ জন, এছাড়া কোতয়ালী মডেল থানায় আটক ৩ জন হলেন, নাজিরশংকরপুর জিরো পয়েন্ট এলাকার আসিফ আলী ও কাজী সাকিবুল ইসলাম, রামনগরের শরিফুল ইসলাম মিন্টু। কেশবপুরে ২ জন, মণিরামপুর ৩ জন, ঝিকরগাছায় ১ জন, বাঘারপাড়ায় ২ জন, ডিবি পুুুলিশ ৪ জনসহ ১৫ জনকে আটক করেছে। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবুল বাশার জানান, ‘গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেলাজুড়ে অভিযান অব্যাহত আছে।’
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাসিস্টদের দমনে গত সোমবার রাত থেকে যশোরে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী।
সোমবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ৫২ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে এই অভিযানে।
আটকের পরে এসব নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নাশকতা ও পুরনো মামলায় আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এদিকে তফশিল ঘোষণার পরে আইনশৃঙ্খলা অবনতি সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্প্রতি কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যশোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টি করছিলেন।
আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা তাদের কর্মীদের নানা কর্মকাণ্ড করার উসকানিও দেন। হঠাৎ যশোরে ডেভিল হান্ট পরিচালনা করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতংক সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দিচ্ছিলেন; তাদের অনেকেরই নিরবতা লক্ষ্য করা গেছে।
