অভয়নগর সংবাদদাতা
আশাতীত ফলন পাওয়ায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাষিরা হাইব্রিড ধান চাষে ঝুঁকছেন। গত বছরের তুলনায় চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে। অন্যদিকে ৮৩০ হেক্টর কম জমিতে উফশী ধানের চাষ হয়েছে।
কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রোগবালাইয়ে ধানগাছ অধিক সহনশীল হওয়ায় হাইব্রিড ধানে অধিক ফলন পাওয়া যায়। ধানগাছের গোছা মোটা ও শক্ত হয়। ধানের গাছ অধিক লম্বা হওয়ায় খড়ের (বিচালির) পরিমাণ বেশি হয়, যা উফশী জাতের তুলনায় অধিক লাভজনক। তাই চাষিরা হাইব্রিড ধান চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। উপজেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় গত বছর বোরো মৌসুমে ১৪ হাজার ৩০ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ৬০৫ হেক্টর আর উফশী ধানের চাষ হয়েছিল ৫ হাজার ৪২৫ হেক্টর। কিন্তু চলতি বোরো মৌসুমে ৯ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদ হয়েছে। পক্ষান্তরে উফশী ধানের চাষ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৯৫ হেক্টরে জমিতে। গত বছর হেক্টরপ্রতি ফলন ছিল ৭ দশমিক শূন্য চার মেট্রিক টন। এবার সেখানে হেক্টর প্রতি ফলন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন।
উপজেলার বগুড়াতলা গ্রামের কৃষক নূর আলম জানান, এবার তিনি তিন বিঘা জমিতে (৪৮ শতকে বিঘা) বোরো আবাদ করেছেন। এর মধ্যে তিনি দুই বিঘা জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে সব ধান ঘরে তোলা হয়েছে। এ ধানে গত বারের তুলনায় বিঘাপ্রতি প্রায় সাড়ে ৩ মণ ফলন বেশি পেয়েছেন। উপজেলার ভবদহ অধ্যুষিত সুন্দলী গ্রামের কৃষক কানু বিশ্বাস এবার এক বিঘায় (৪২ শতকে বিঘা) এসএল-৮ এইচ এবং এক বিঘায় রড মিনিকেট আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এক বিঘায় ৩০ মণের ওপরে মিনিকেট ধান পেয়েছি। বাকি এক বিঘার মধ্যে ১২ কাঠার এসএল-৮ ঝেড়ে ২১ মণ ধান পেয়েছি।’
উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় দায়িত্বে থাকা ব্লক সুপারভাইজার অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘ভবদহ অঞ্চলের চারটি ইউনিয়নসহ উপজেলায় বিল এলাকা বেশি। ওই নিচু বিলে উফশী জাতের ধান পাকা মৌসুমে মাটির সঙ্গে নেতিয়ে পড়ে। ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হন। কিন্তু নিচু জমিতে হাইব্রিড ধানে অভাবনীয় ফলন আর বাড়তি বিছালির আশায় ধানের দাম কম হলেও হাইব্রিড চাষে কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মত লাভলী খাতুন বলেন, ‘উপজেলায় এবার বোরো আবাদের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, ফলনও ভালো হয়েছে। হেক্টরে গড়ে প্রায় ৭ মণ ফলন বেড়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ধানের দাম কিছুটা কম হলেও, অধিক ফলন আর বাড়তি বিছালি আর ধানে রোগবালাই কম থাকায় অভয়নগরের চাষিরা দিনদিন হাইব্রিড ধান চাষে ঝুঁকছেন।