# কেন্দ্র সচিবদের ১১ জরুরি সতর্কতা
# কেন্দ্র পরিদর্শনে ১৩ ভিজিলেন্স টিম
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে ২ হাজার ৫৭০টি বিদ্যালয় থেকে ২৯৯ কেন্দ্রে অংশ এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৪ জন। যা গত বছর ছিলো এক লাখ ৬২ হাজার ৭২৬জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর কমেছে ২১ হাজার ৬৬২ পরীক্ষার্থী। এদিকে, পরীক্ষা নকলমুক্ত ও সুষ্ঠু পরিবেশে গ্রহণ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। প্রশ্নপত্র ফাঁস মুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ১৩টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করেছে বোর্ড। একই সাথে কেন্দ্র সচিবদের দেয়া হয়েছে ১১টি জরুরি সতর্কতা নির্দেশনা।
বোর্ড সূত্র জানায়, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষা বোর্ডের ২ হাজার ৫৭০টি বিদ্যালয় থেকে ২৯৯ কেন্দ্রে অংশ নেবে এক লাখ ৪১ হাজার ৬৪ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছেলে ৬৯ হাজার ৮৫ ও মেয়ে ৭১ হাজার ৯৭৯ জন। নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৫৮ ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ১২ হাজার ২৮৬।
বিজ্ঞান শাখায় পরীক্ষার্থী ৪০ হাজার ১৪৪, মানবিক শাখায় পরীক্ষার্থী ৮৫ হাজার ২৩৮ ও ব্যবসায়ী শিক্ষা শাখায় পরীক্ষার্থী ১৫ হাজার ৬৮২। এর মধ্যে খুলনার ৫৯ কেন্দ্রে অংশ নেবে ২১ হাজার ৯৬৬ পরীক্ষার্থী।
ছেলে ১০ হাজার ৯২২ জন ও মেয়ে ১১ হাজার ৪৪ জন। বাগেরহাটের ২৮ কেন্দ্রে অংশ নেবে ১২ হাজার ৪০৯ পরীক্ষার্থী। ছেলে ৫ হাজার ৬৯৯ জন ও মেয়ে ৬ হাজার ৭১০জন।
সাতক্ষীরার ২৯টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ১৪ হাজার ৬১৫ পরীক্ষার্থী। ছেলে ৭ হাজার ২৫৯ জন ও মেয়ে ৭ হাজার ৩৫৬ জন। কুষ্টিয়ার ৩১ টি কেন্দ্রে অংশ নেবে২০ হাজার ১৭ পরীক্ষার্থী। ছেলে ৯ হাজার ৬৯৭ জন ও মেয়ে ১০ হাজার ৩২০ জন। চুয়াডাঙ্গার ১৯টি কেন্দ্রে অংশ নেবে৯ হাজার ৩৮৭ পরীক্ষার্থী। ছেলে ৪হাজার ৫৮৩ জন ও মেয়ে ৪ হাজার ৮০৪ জন। মেহেরপুরের ১৩ টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ৬ হাজার ৯১১ পরীক্ষার্থী। ছেলে তিন হাজার ৩৮২ জন ও মেয়ে ৩ হাজার ৫২৯জন। যশোরের ৫৩ কেন্দ্রে অংশ নেবে ২৩ হাজার ৬৬৪ পরীক্ষার্থী।
ছেলে ১১ হাজার ৬৪১ জন ও মেয়ে ১২ হাজার ২৩ জন। নড়াইলের ১৪টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ৬ হাজার ৩২৯ পরীক্ষার্থী। ছেলে ২হাজার ৯৮১ জন ও মেয়ে ৩ হাজার ৩৪৮ জন। ঝিনাইদহের ৩৬টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ১৬ হাজার ৮১৩ পরীক্ষার্থী। ছেলে ৮ হাজার ৫৭২ জন ও মেয়ে ৮ হাজার ২৪১ জন। মাগুরায় ১৭টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ৮ হাজার ৯৫৩ পরীক্ষার্থী। ছেলে ৪ হাজার ৩৪৯ জন ও মেয়ে ৪ হাজার ৬০৪ জন।
এদিকে, সুষ্ঠু, নকল মুক্ত ও প্রশ্ন ফাঁস মুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ১৩টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। গঠিত ভিজিলেন্স টিমের সদস্যরা নির্ধারিত দিনে কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শনের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। তারা পরিদর্শন করবেন বোর্ডের আওতাধীন ২৯৯টি পরীক্ষা কেন্দ্র।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন সাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বোর্ডের ওয়েবসাইটের চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে সমন্বয়কারী ভিজিলেন্স টিমের সদস্যগণকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কেন্দ্রে পরিদর্শনের দায়িত্ব বন্টন করবেন। ভিজিলেন্স টিমের সদস্যগণ স্মার্টফোন এর পরিবর্তে সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন। পরীক্ষা কক্ষে অহেতুক ঘোরাফেরা ও অযথা কথা বলা যাবে না। প্রশ্নফাঁস এবং কোনোরূপ অব্যবস্থা পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বা স্থানীয় প্রশাসনকে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ফোন মারফৎ অবগত করতে হবে।
উল্লিখিত তারিখের পরীক্ষা পরিদর্শন শেষে পরিদর্শন রিপোর্ট একত্রে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে দাখিল করতে হবে। পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাগণ বিল দাখিল করার সময় কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র পৃথকভাবে বিলের সাথে সংযুক্ত করে বিল দাখিল করতে হবে।
অপরদিকে, এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকল মুক্ত পরিবেশে গ্রহণের লক্ষে কেন্দ্র সচিবদের জন্য ১১টি জরুরি সতর্কতা দিয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মতিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পরীক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা কক্ষে সকাল সাড়ে ৯ টার মধ্যে প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রে সংযুক্ত ট্যাগ অফিসার, কেন্দ্র সচিব বা তার মনোনীত প্রতিনিধিকে নিয়ে ট্রেজারি, থানা অথবা নিরাপত্তা হেফাজত হতে প্রশ্নপত্র গ্রহণ করবেন। পরীক্ষা শুরুর পূর্বে ট্যাগ অফিসার, কেন্দ্র সচিব এবং পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও সাক্ষরে বিধি অনুসরণ করে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে। এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫-এর সিকিউরিটি প্যাকেট খোলার সময় পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী সেট কোড, বিষয় পত্র ও বিষয় কোড ভালভাবে দেখে এবং সিকিউরিটি প্যাকেট খোলার পরও আরো একবার সেট কোড, বিষয়, পত্র ও বিষয় কোড যাচাই করে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার জন্য অনুরোধ করা হলো। সিকিউরিটি প্যাকেট খোলার পরও আরো একবার সেট কোড, বিষয় ও বিষয় কোড যাচাই করে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে। প্রবেশপত্র ও নিবন্ধন কার্ড ছাড়া কাউকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া যাবে না। প্রতিদিনের পরীক্ষা শেষে ওই দিনই লিখিত উত্তরপত্র বাহক মারফৎ প্রেরণ করতে না পারলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক বিভাগ বা রেলওয়ে পার্সেলের মাধ্যমে বোর্ডে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষা শেষে লিখিত উত্তরপত্র, নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র ও টপ কভার কোনো ক্রমেই ট্রেজারি, থানা অথবা ব্যাংকে সংরক্ষণ করা যাবে না। লিখিত উত্তরপত্র, নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র ও টপ কভার প্রেরণের সময় প্রতি ২০০ টির জন্য আলাদা আলাদা শিরোনাম পত্র অবশ্যই প্যাকেটের সংগে প্রেরণ করতে হবে। প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিস্টিক এবং ডাউন সিনড্রোম বা সেরিব্রালপাল্সি আক্তান্ত) পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র ‘হলুদ কাপড়ে’ আলাদাভাবে প্রেরণ করতে হবে। লিখিত উত্তরপত্র, নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র এবং টপ কভার পরীক্ষা শেষে ওই দিনই আকাশি রংয়ের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে যথাযথ ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে ইংরেজি ভার্সন পরীক্ষার্থীদের শুধুমাত্র লিখিত উত্তরপত্র আলাদা করে প্রেরণ করতে হবে এবং মোড়কের উপর “ইংরেজি ভার্সন” কথাটি লিখতে হবে। বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে কক্ষ প্রত্যবেক্ষক কেন্দ্র সচিব বরাবর লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। কেন্দ্র সচিব বোর্ড হতে প্রেরিত গোপন বিবরণী ফরম পূরণ করে প্রতিষ্ঠানের প্যাডে আলাদা ফরোয়ার্ডিং করে সকল কাগজপত্র উত্তরপত্রের সাথে একত্রে ‘লাল কাপড়ে’ প্যাকিং করে বোর্ডে প্রেরণ করতে হবে। পরীক্ষা চলাকালীন এবং পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পূর্বে বা পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ ব্যতীত অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন বলেন, ‘পরীক্ষা নকলমুক্ত ও সুষ্ঠু পরিবেশে গ্রহণ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার খাতা ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র সচিবদের দায়িত্বে গাফলতি কোনভাবে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পায় ও কমে। তবে এবারের পরীক্ষায় কেন পরীক্ষার্থী কমে গেল সেটা বিশ্লেষণ করে বলা কঠিন।’