কাজ বন্ধ রাখায় ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
কিছুদিন আগে তার কাজ বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। -আজিজুল হক, সদর উপজেলা প্রকৌশলী
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলার মনোহরপুর-ওসমানপুর সড়কের পাকাকরণের নির্মাণ কাজ আট মাস বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তা খুঁড়ে রাখায় সড়ক দিয়ে কেউ চলাচল করতে পারছেন না। বিশেষ করে কৃষকরা তাদের বোরো ধান মাঠ থেকে ঘরে তুলতে বিপাকে পড়েছেন। একইভাবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে পা পিছলে পড়ে গেলে কর্দমাক্ত হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর যেতে পারছেন না। কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এমনকি বাইসাকেল নিয়ে চলাচলেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোর সদরের ইছালি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মনোহরপুর থেকে ওসমানপুর সড়কের (কোড নং ২৪১৪ ৭৫২০২) এক হাজার ৭৫০ মিটার পাকাকরণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ২১ জুলাই। কিন্তু সড়কটির কিছু কাজ করে সেপ্টেম্বর মাসে বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।
এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ লোকজন সদর উপজেলার প্রকৌশলী সড়ক বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে কোন প্রতিকার পাননি। এ এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। আর ৯৫ ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সাথে জড়িত। এলাকায় কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র না থাকায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করার জন্য পার্শ্ববর্তী দূরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে বাড়িতে ধান তোলা ও বিক্রির জন্য পার্শ্ববর্তী বাজারে যাতায়াত করতে হয় ওই সড়ক দিয়ে। প্রায় এক বছর আগে এ সড়কের সোলিং উঠিয়ে পাকাকরণের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ফলে রাস্তায় গর্ত তৈরি হয়। সড়কের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ২১ জুলাই। কিন্তু সড়কটির অর্ধেক কাজ করে সেপ্টেম্বর মাসে বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মনোহরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক সরদার জানান, সড়কের পাকাকরণের নির্মাণ কাজ ৮ মাস বন্ধ থাকায় আমাদের বোরো ধান মাঠ থেকে ঘরে তুলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বাজারে বিক্রি করতে গিয়েও নসিমন পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পাওয়া গেলেও ভাড়া তিনগুণ চাচ্ছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবনী আক্তার জানায়, গত সপ্তাহে বৃষ্টি হলে স্কুলে যাওয়ার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে সারা শরীরে কাদাপানি লেগে যায়। এজন্য এদিন আর স্কুলে যেতে পারেনি। প্রায় দিনই কেউ না কেউ এ অবস্থায় পড়ে। আমাদের চলাচলে খুব অসুবিধা হচ্ছে।
পাশের খাজুরা বাজারের ব্যবসায়ী আজিজ হোসেন জানান, সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। প্রায় দিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কের কাজ ৮ মাস বন্ধ রাখার কারণে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বাইসাইকেল চলাচলেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এলাকাবাসী। এমন কি হেঁটেও চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি রাস্তাটি দ্রুত পিচের কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্থানীয় ইছালি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, এ সড়কের কারণে এবার কৃষকদের মাঠ থেকে ধান তুলতে কি পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। রাস্তার কাজ শেষ করার জন্য একাধিকবার আমরা ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ার অফিসে বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এ সড়কে চলাচল করতে মানুষের খুব দুর্ভোগ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার আনন্দ বিশ্বাস আট মাস বন্ধ থাকার কথা স্বীকার বলেন, ‘ফান্ডের সমস্যা ছিল। সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবো। শনি-রোববার মেশিনপত্র যাবে। কাজ তাড়াতাড়িই করে দেবো।’
সদর উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুল হক বলেন, কাজ বন্ধ রাখায় ঠিকাদার আনন্দ বিশ্বাসকে একাধিকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কাজ করেননি। ফলে কিছুদিন আগে তার কাজ বাতিল করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কাছে সুপারিশ করেছি। #