স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের কাছে একটা বছর পর পর পবিত্রতা, আত্মশুদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে মাহে রমজান। আর রমজানে প্রতিদিন ইফতারির জন্য নানা পদের খাবারের আয়োজন করা হয়। ইফতারির খাদ্যের তালিকায় হরেক রকমের মিষ্টির মধ্যে রোজাদারদের পছন্দের শীর্ষে রেশমি জিলাপি। রমজান উপলক্ষে বিশেষ পদ্ধতিতে এই জিলাপি তৈরি করা হয়। রমজান মাসুজড়ে চলে বিক্রির হিড়িক। অতুলনীয় স্বাদের জিলাপি কিনতে ভিড় করেন ক্রেতারা।
আজ (বুধবার) বিকেলে যশোর শহরের ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাহারি ইফতারের সাথে দেখা মেলে রেশমি জিলাপির। চিকন, মচমচে এই রেশমি জিলাপি মুখে দিতেই মুচমুচে জিলাপির চিনির শিরায় ভরে যায় মুখ। সুমিষ্ট, সুগন্ধে প্রাণ জুড়ানো আকর্ষণীয় এই রেশমি জিলাপির প্যাচ অনেক বেশি।
একটা জিলাপিতে অনেকগুলো ছোট ছোট প্যাচ থাকাতে কিছুটা ফুটন্ত ফুলের মত দেখায়। একটু কড়া করে ভেজে চিনির সিরায় ডুবালেই সিরায় টলমল করে রেশমি জিলাপি। এই জিলাপি তৈরির উপাদান সাধারণ জিলাপির উপাদানের মত না। রেশমি জিলাপি তৈরিতে লাগে পরিমাণমত ময়দা, চিনি, চালের গুঁড়া, মাসকলাই ডালের গুঁড়া, খাবার সোডা, গোলাপজল, ঘি বা তেল (ভাজার জন্য)।
রেশমি জিলাপি তৈরিতে সময় ও কারিগরদের পরিশ্রম করতে হয় বেশি। প্রথমে মাসকলাই ডালের গুঁড়া, ময়দা, চালের গুঁড়া, পরিমাণমতো পানি, খাবার সোডা ও গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। চিনির শিরা তৈরি করা, তেল ভালোভাবে গরম করে ফানেলে ময়দার মিশ্রণ ঢেলে চাপ দিয়ে গরম তেলের উপর জিলাপির আকৃতি তৈরি করতে হয়। সর্বশেষ জিলাপিগুলো মচমচে করে ভেজে সাত-আট মিনিট চিনির সিরায় ডোবানোর পরে উঠিয়ে পরিবেশন করা হয় দারুণ স্বাদের রেশমি জিলাপি। এ বছর প্রতি পিস রেশমি জিলাপি দশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ওজন হিসেবে প্রতি কেজির দাম ৩শ’ টাকা। নিউ নূর হোটেলে রেশমি জিলাপি কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন বলেন, এই জিলাপি দেখতেও সুন্দর, খেতেও মজাদার। দাম একটু বেশি হলেও ইফতারির টেবিলে রেশমি জিলাপি না রাখলে নিজেদের মনে অপূর্ণতা থেকে যায়। বিশেষ করে বাচ্চাদের কাছে খুব পছন্দের একটা খাবার রেশমি জিলাপি।
ক্যাফে প্রেসক্লাব যশোরের বিক্রেতা মোজাম্মেল হক বলেন, প্রথম রোজায় রেশমি জিলাপির প্রচুর চাহিদা ছিল। রোজার দ্বিতীয় দিনেও চাহিদা বেশি। চিনির সিরা যত সময় থাকে তত সময় তৈরি করা হয়। সকাল ১১ টা থেকে তৈরির কাজ শুরু হয়। ইফতারির সময় হওয়া পর্যন্ত কারিগরের ফুরসত থাকে না। সারা বছর টুকটাক চাহিদা থাকলেও রোজার সময় চাহিদা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় রনি হোসেন নামের এক ক্রেতার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, এই জিলাপির স্বাদের কথা বলে বোঝানো যাবে না। যেমন মচমচে তেমন স্বাদে ভরা। সারাবছর পাওয়া যায় না। রোজার সময় পাই। যে কারণে ইফতারিতে রেশমি জিলাপি রাখি। পরিবারের সবাই মিলে রেশমি জিলাপি দিয়ে ইফতারি করি।
