বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ চলছে দেশজুড়ে। যশোরেও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে। যশোরের জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন ত্রাণ সংগ্রহের কাজে। এ কার্যক্রমে বাদ যায়নি জেলার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ইউটিউবের ব্লকগাররাও। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যানারে নিজেদের মতো করে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ ও অর্থ সংগ্রহে নেমেছেন। কেউ ছোট ছোট বাক্স নিয়ে ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করছেন। কেউ বুথ বসিয়ে সংগ্রহ করছেন ত্রাণ ও নগদ অর্থ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমগ্র জেলায় ৩০টির মতো সংগঠন গত দুইদিন ত্রাণ ও অর্থ সংগ্রহের কাজে নেমেছেন। সবারই লক্ষ্য একটাই, বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
শনিবার সরেজমিনে যশোর শহরে ঘুরে দেখা গেছে, রিকশাতে মাইক বেঁধে বিভিন্ন মানবিক ও কালজয়ি গান গেয়ে শহরে ঘুরে ঘুরে অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রি সংগ্রহ করছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোর। এতে ৩০টির বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পী সদস্যরা অংশ নেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী পেশার মানুষের নিয়ে গঠিত ‘বন্যার্তদের পাশে যশোর’ তারাও রিকশা ইজিবাইকে ঘুরে ঘুরে অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রি সংগ্রহ করছেন। ছোট ছোট বাক্স নিয়ে ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করছেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর, উন্নত মম শির, প্রেস ক্লাবের সামনে গত দুই দিন ধরে অপটিলাক্স বিডি নামে একটি সংগঠন ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। দড়াটানাতে প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিবেক স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা অস্থায়ী বুথ স্থাপন করছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রি সংগ্রহ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আহ্বান, ঐক্যবন্ধন, বৈষম্য বিরোধী কারামুক্তি আন্দোলন, সামাজিক সচেতন সংস্থা, জাগ্রত যশোর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড যশোর, গ্রান্ড দরবার, ৯৩ ফাউন্ডেশন, উদীচী, ইমাম পরিষদ যশোরসহ বিভিন্ন সংগঠন। ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন মসজিদে মসজিদেও। এছাড়া বন্যার্তদের ত্রাণ সামগ্রি পাঠিয়েছে যশোরের আলোচিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থাও। এদিকে বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন যশোর ও সদর উপজেলা প্রশাসন। শনিবার থেকে ঐতিহ্যবাহী যশোর কালেক্টরেট ভবনের নিচ তলায় ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়েও ত্রাণসামগ্রি সংগ্রহের কাজ চলছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ত্রাণসামগ্রি সংগ্রহের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন।
জেলাটিতে সব জায়গায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দানের হাত বাড়িয়েছেন। মুহূর্তের মধ্যে ট্রাক ভরে গেছে নানা ধরনের জিনিসপত্রে। গত দ্ইু দিনে জোগাড় হয়েছে লাখ লাখ টাকা, যা মানুষকে অবাক করেছে। এটি দেখে অনেকেই খুশি। যশোরে ত্রাণ সংগ্রহের খবরে যশোরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আপ্লুত হয়েছেন। অনেকের বক্তব্য, মানুষ যেভাবে সহানুভূতির হাত বাড়িয়েছে সেটি অভূতপূর্ব। এভাবে সবাই এগিয়ে আসলে বন্যা দুর্গত মানুষ সাহস পাবেন। আবারও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, বানভাসীদের জন্য যশোরের আট উপজেলায় শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। গত দুই দিনে তিন ট্রাকের মতো ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া গেছে। এছাড়া নগদ অর্থও পাওয়া গেছে। এগুলো প্যাকেট করে আমরা বন্যা দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁচ্ছে দিবো।’
মৈত্রী ভলান্টিয়ার্স যশোরের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু বলেন, ‘দেশের যেকোন দুর্যোগে মৈত্রী ভলান্টিয়ার্স কাজ করে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের বন্যাতেও কাজ করছে। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যে যা পারছে, সাহায্য করছে। বন্যার্তদের পাশে যশোর’ সংগঠনটির সমন্বয়ক কামরুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘শুক্রবার ও শনিবার মিলে ৩ লক্ষাধিক নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। এছাড়া জামা-কাপড়সহ বিভিন্ন শুকনা খাবার তিন ট্রাকের মতো। যশোরবাসী অনেক মানবিক। তা না হলে আমরা যার দরজা বা কাছে যাচ্ছি, কেউ ফিরিয়ে দিচ্ছেন না। আমরা যা সংগ্রহ করেছি। দ্রুত বানভাসিদের কাছে পৌঁচ্ছে দিবো।’
নিজেদের সংগঠনের সদস্য, বিভিন্ন দানশীল মানুষের দেয়া অর্থ দিয়ে বন্যার্ত মানুষের ত্রাণ সামগ্রি পাঠিয়েছেন শহরের খড়কিস্থ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা প্রতিষ্ঠাতা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘আমি ফেজবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম বানভাসীদের পাশে দাঁড়াতে জন্য। তার পর আমার বন্ধু, সুহৃদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা সরাসরি বা কারো মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রি পাঠিয়ে আমাদের কাছে। এর পর নিজেদের সদস্যদের ছেলে মেয়েরা সেটি প্যাকেট করে ভলান্টিয়ার্স টিম গঠন করে বন্যা কবলিত মানুষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই বন্যা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে বন্ধন সেটা আরোও সৃদৃঢ় হলো।’
যশোর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘সবশ্রেণী পেশার মানুষের ত্রাণ সামগ্রি সংগ্রহের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। বন্যার খবরে যশোরের সব শ্রেণী পেশার সংগঠন যেভাবে পথে নেমেছে, এর থেকে প্রমাণ হয় যে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ ও মানবিক। তাদের আয়োজন বন্যার্ত মানুষের জন্য কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। তবে বন্টনের ক্ষেত্রে এতো সংখ্যাক মানুষ বন্যাকবলিত এলাকায় না যেয়ে, সেখানকার প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিলে সুষমবন্টন হতো ‘