বাংলার ভোর প্রতিবেদক
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি ভেসে আসা দল নয়। বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না। আমরা যদি মাঠে নামি তাহলে রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভিন্নভাবে আসবে। যশোরে সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য, সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির আয়োজনে বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বর্ষীয়ান রাজনীতিক তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় নেতাকর্মী-সমর্থকদের ঢল নামে। স্মরণসভা রূপ নেয় সমাবেশে। টাউন হল মাঠ ছাড়িয়ে জনসমাগম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের রাস্তায়।
‘উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করছেন’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা ঐকমত্যের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সাতদিন সময় দিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিকদল তো হাতের খেলনার মতো নয়। সংস্কার কমিশনের সব সভায় আমরা গিয়েছি। মতামত দিয়েছি। যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। যেগুলো হয়নি, সেগুলো পরবর্তী পার্লামেন্টে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তা না করে তারা পক্ষপাতদুষ্টু হয়ে কাজ করছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্য করে স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। চব্বিশের আন্দোলনের পর সুযোগ হয়েছে গণতন্ত্রের পথে ফেরার। দয়া করে পানি ঘোলা করবেন না। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবেন না।
বিএনপি মহাসচিব জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হবে, এর আগে নয়। সংস্কার কমিশনে আমরা যে সব বিষয়ে একমত হয়েছি, তার ভিত্তিতে কাজ শুরু করুন। যেগুলো হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত পার্লামেন্টে হবে। দ্রুত তফসিল ঘোষণা করুন। নির্বাচন দিয়ে দিন। অন্যথায় আপনারা ব্যর্থ হবেন। সেক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।
বক্তব্য শেষে সম্প্রতি পাঁচটি আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেন মির্জা ফখরুল। সকলকে সমবেতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি ধানের শীষের পক্ষে স্লোগান দেন। এছাড়া সদরের মনোনীত প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের হাত উঁচিয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেন। যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, ঝিকরগাছা থানা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আবুল হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নজরুল ইসলাম, যশোর বারের সাবেক সভাপতি অ্যাড. মোহাম্মদ ইসহক, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, ইমাম পরিষদের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান সুমি, শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ প্রমুখ। স্মরণসভায় দোয়া পরিচালনা করেন মুফতি মাওলানা আমানুল্লাহ কাসেমী। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, পুত্র কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
এদিকে, দলের মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে তৃণমূলে ভোটের আমেজ। চাঙ্গা তৃণমূল। ভোটের আগে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য বার্তা দেবেন দলের মহাসচিব। সেই বার্তা পেতেই মিছিলে মিছিলে স্লোগানে তরিকুল ইসলামের নেতাকর্মীরা দুপুর থেকেই খন্ড খন্ড মিছিলসহকারে যোগ দেন স্মরণসভায়। একপর্যায়ে স্মরণসভায় রূপ নেয় জনসভায়। স্মরণসভায় আসা মণিরামপুর উপজেলার নাগরঘোপ গ্রামের জাকির হোসেন (৭০) বলেন, ফখরুল সাহেব আসছে শুনে সেই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। সারাদিন না খেয়ে এখানে আছি। ফখরুল সাহেবের বক্তব্য শুনতে এসেছি।
শার্শার পুটখালি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ও স্থানীয় বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে অসংখ্য মামলায় জেল খেটেছি, পালিয়ে বেড়িয়েছি। নেতাকর্মীরা কোন প্রোগ্রাম ঠিকমত করতে পারিনি। ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে, আমরা এখন নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করছি। যশোর উন্নয়নের কারিগর তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় এসেছি, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের আগে দলের মহাসচিব এসেছে। তিনি বার্তা দিয়েছেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার। আমরা অক্ষরে অক্ষরে কাজ করে যশোরের ছয়টি আসনই জিয়া পরিবারকে উপহার দেবো।’
