বাংলার ভোর ডেস্ক
ভারতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। সবশেষ তিনি পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগরের একটি বাড়িতে ছিলেন। ১৩ মে পূর্বপরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে চিকিৎসার জন্য বেরিয়ে আর ফেরেননি। পরে দিল্লিতে আছেন জানালেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নিখোঁজ ডায়েরির পর তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ।
জানা গেছে, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান আনোয়ারুল আজিম। প্রথমে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগরের মন্ডলপাড়া লেনে পূর্ব পরিচিত গোপাল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। পরের দিন ১৩ মে ডাক্তার দেখাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বরাহনগর বিধান পার্ক কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে গাড়িতে ওঠেন। যাওয়ার সময় গোপাল বিশ্বাসকে বলে যান দুপুরে ফিরবো না, সন্ধ্যায় এসে খাবো। কিন্তু তার ফিরে আসার কথা থাকলেও আর ফেরেননি। এ ঘটনার পর স্থানীয় থানায় আনোয়ারুল আজিমের নিখোঁজের বিষয়ে ডায়েরি করেন গোপাল বিশ্বাস। ডায়েরিতে তিনি বাংলাদেশি এমপির বিষয়ে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এতে তিনি আরও বলেছেন, সন্ধ্যায় বাড়িতে না ফিরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজে আনোয়ারুল আজিম জানান, আমি বিশেষ কাজে দিল্লিতে যাচ্ছি। দিল্লি গিয়ে ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই। এরপর ১৫ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার গোপাল বিশ্বাসকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, আমি দিল্লি পৌঁছালাম, আমার সঙ্গে ভিআইপি-রা আছে, ফোন করার দরকার নেই।
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ জোন) অনুপম সিং বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত শুরু হয়েছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা আসেনি। তাকে ফোন করা হলে তার ফোন বাজে, কিন্তু তিনি ফোন ধরছেন না। যদিও তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ জোন) অনুপম সিং। পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস। সেখানের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি আমরা নজরে রাখছি।
এদিকে, রোববার সকালে ঢাকায় অবস্থানরত এই সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ তিনি জানান, কলকাতায় চিকিৎসার জন্য গেলেও পৌঁছানোর একদিন পর বন্ধুর বাড়ি থেকে লাগেজ ছাড়া বের হন আনোয়ারুল আজিম। দুদিন পর ম্যাসেজ পাঠান তিনি জরুরি কাজে দিল্লি রয়েছেন। সর্বশেষ তার মিসড কলের অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত বর্ডারের বেনাপোল দেখায়। তাহলে তিনি কোথায়-এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। বাড়ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। রউফ আরও জানান, গত ১২ মে তিনি চিকিৎসার জন্য সড়কপথে একাই ভারতে যান। তিনি ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকায় গোপাল নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। পর দিন তিনি বাইরে থেকে আসছি বলে বন্ধুর বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি।
দুদিন পর অর্থাৎ ১৫ মে বন্ধু গোপালের কাছে ম্যাসেজ পাঠান তিনি জরুরি কাজে দিল্লি এসেছেন চিন্তার কারণ নেই। এরপর ১৬ মে সকালে তার মোবাইলে এমপি আনারের বাংলাদেশের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে একটি মিসড কল আসে এবং তারপর থেকে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। যখন মিসড কলটি আসে তখন এমপির অবস্থান ছিল বেনাপোল এলাকায়। যেটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। এ ছাড়াও অন্যান্য সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাকে পাওয়া যায়নি। এভাবে তিন দিন পার হলেও পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি বলে জানা গেছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে, জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, তার পরিবার থেকে আজকেই বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু বিষয়টি জেনেছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পিএসের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন।
উল্লেখ্য, আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।