কেশবপুর পৌর প্রতিনিধি
কেশবপুরে রমজান মাসে বিষাক্ত কেমিকেলে পাকানো কলায় সয়লাব হয়ে গেছে। রমজান মাসে পাঁকা কলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া উঠেছেন। উপজেলার বিভিন্ন কলার আড়তে কলা পাকানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিকেলের মাধ্যমে।
জানা গেছে, বিষাক্ত কেমিকেলে পাকানো কলা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার, ফুটপাতের দোকান, স্কুল-কলেজের পাশের দোকানসহ নানা স্থানে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও এসব বিষাক্ত কেমিকেলে পাকানো কলা ভ্যানে করে প্রতিটি বাসা বাড়ির সামনে বিক্রি করা হচ্ছে। কলা পাকা মনে হলেও উপরে খোসা হলুদ কিন্তু ভেতরে কাঁচা। রমজান মাস ছাড়াও সারা বছর এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা একইভাবে কলা পাকিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে আসছে। এসব বিষাক্ত কলা খেয়ে শিশু ও বৃদ্ধসহ সব শ্রেণির মানুষ দিনদিন দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গতাল বিকেলে কেশবপুর পৌর শহরসহ উপজেলার, হাসানপুর, মঙ্গলকোট, সাগরদাঁড়ি, চিংড়া, ভান্ডারখোলা, সাতবাড়িয়া, জাহানপুর কলাগাছি, ভরত ভায়না, বগা, পাঁজিয়া, গৌরিঘোনাসহ বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে কাঁচা ও অপরিপক্ব কলা বিষাক্ত কেমিকেলে পাকানো কলায় বাজার সয়লাব। খুচরা ব্যাবসায়ীরা জানান, আমরা আড়ত থেকে পাকা কলা কিনে বাজারে খুচরা বিক্রি করি। অধিকাংশ আড়তে বিষাক্ত কেমিকেলে দিয়ে কলা পাকানো হয় বলে তাঁরা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কলার বেপারী বলেন, তারা দ্রুত কলা পাকানোর কৌশল হিসেবে বাগান থেকে কলা কেনার পর কলায় প্রমোট ও রিপেনসহ নানা ধরনের কেমিকেল ব্যবহার করে থাকেন। ওই কেমিকেল মিশ্রিত কলা দুই-এক দিনের মধ্যেই হলদে রং ধারণ করে খাবার উপযোগী হয়। যা তাদের বিক্রি করতে সহজ হয়। আড়তের এক কর্মচারী নাম না প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিনই রাতে কাঁচা কলা আসে। আমরা পানিতে ইথিফন দিয়ে সেই পানিতে কলার কাঁদি ডুবাই। তারপর সেগুলো আবার প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখি। দ্রুত কলার দরকার হলে কখনো কখনো আগুন জ্বালিয়ে তাপ দেই। তাতেই কলা পেকে যায়। এক কাঁদি কলা পাকাতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানান তিনি।
বাজারে কলা কিনতে আসা আবদুল জলিল মোড়ল, মনিরুজ্জামান মনি, শহিদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, নুরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা তো প্রতিদিনই কলা খেয়ে থাকি। আমাদের বাচ্চাদের জন্য পাকা কলা কিনতে হয়। কিন্তু রমজান মাসে দেখছি এসব কলার ভেতর শক্তই থাকে। এক দিনের বেশি রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। কলায় কোনো পুষ্টি থাকে না। আরেক ক্রেতা বলেন,আগে কলার অন্য রকম একটা স্বাদ ছিল। এখন আর তা নেই। তিনি বলেন,এখন কলা দেখলেই বোঝা যায় এগুলো গাছে পাকেনি। জোর করে পাকানো হয়েছে।
কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, বিষাক্ত এসব দাহ্য পদার্থ মিশানো কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সঙ্গে সঙ্গে বমিভাব ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত কোনো খাদ্য গ্রহণ করলে তার প্রভাব পড়ে লিভার ও কিডনির ওপর।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুহিন হোসেন বলেন, এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।