বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর/তখনো জাগিনি যখন জোহর/হেলায় খেলায় কেটেছে আসর/মাগরিবের ঐ শুনি আজান/জামাতে শামিল হওরে এশাতে/এখনো জামাতে আছে স্থান” জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানের উদ্ধৃতি করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেছেন, ভারত আমাদের জল এবং স্থলে সমান ভাবে আগ্রাসন চালাচ্ছে। এই সমস্যা থেকে আমাদের উত্তরণ পেতে হলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হলে আমাদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। বিশ্বময় এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর এই আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। যে সরকার কখনো নতজানু হবে না।
যশোরে জিয়া পরিষদের উদ্যেগে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস ও আজকের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভা প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রেসক্লাব যশোরের দ্বিতীয়তলা অডিটরিয়ামে জেলা জিয়া পরিষদ যশোরের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক (অব.) ফিরোজা খাতুনের সভাপতিত্বে “ফারাক্কা দিবস ও আজকের ভাবনা” শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভা বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহক, অধ্যক্ষ পাভেল চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মফিজুর রহমান রুননু, মো. নূরুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় প্রধান অতিথি আরও বলেন, আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে। ১৯৭৬ সালে মাওলানা ভাসানী ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ছিলেন। আমরা সে সময় ভারতীয় আগ্রাসনকে সম্পূর্ণভাবে রুখতে সক্ষম না হলেও ভারতকে চাপে রাখতে পেরেছিলাম।
আমাদের সময় ফুরিয়ে যায়নি, এখনও সময় আছে ফারাক্কা ব্যবস্থা রুখে দেয়ার। ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্য করেছে বটে, তবে কতটুকু করেছে যোগ বিয়োগ করলে সেটা আপনারা বুঝতে পারবেন। ৪৫ দিনের জন্য তৎকালীন সময় শেখ মুজিব এবং ইন্দিরা গান্ধীর সমন্বয়ে এই বাঁধ চালু হয়েছিলো, সেই ৪৫ দিন কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। নদীর কোন সীমানা নাই এটাই নদীর ধর্ম। ভারত পানি প্রবাহ যেভাবে বাঁধাগ্রস্থ করছে, পৃথিবীর কোথাও এমন ব্যবস্থা আছে কিনা সন্দেহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, পৃথিবীতে যেখানে সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। মজলুম জননেতা ভাসানী ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। ঠিক তেমনিভাবে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে এই মরণ বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ভারতের এই পানি আগ্রাসন থেকে আমাদের উত্তরণ পেতে হলে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে, বিকল্প বাধের ব্যবস্থা করতে হবে। নতজানু পররাষ্ট্র নীতি থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ভারত ফারাক্কা বাধের মাধ্যমে আমাদের দেশকে সর্বনাশ করছে। ফারাক্কা বাধ এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই বাঁধের প্রভাবে সারাদেশে নদী শেষ হয়ে গেছে। পানির কারনে আজকে দেশে প্রধান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কৃষি খাত উন্নয়নে ব্যহত হচ্ছে। আগামীতে দেশের কৃষি খাত এই বাধের কারনে আরও খারাপ অবস্থায় পড়বে। ভারতের আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে হলে আগামীতে আমাদের দলমত নির্বিশেষে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।