বাংলার ভোর ডেস্ক
যশোরসহ দেশের সাত জেলায় ঝড় ও বজ্রপাতে ১০জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন, নিখোঁজ রয়েছেন দুই জেলে। এ ছাড়া অন্তত ২৫টি গরু ও মহিষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, নেত্রকোণা, পিরোজপুর ও ভোলায় এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এ সময় ঝড়ে গাছ পড়ে বাড়িঘর ও বৈদ্যুতিক খুঁটি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ঝড়ে গাছ ভেঙে পটুয়াখালীর বাউফলে এবং পিরোজপুর সদর উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বজ্রপাতে ঝালকাঠি সদর ও কাঠালিয়া উপজেলায় তিনজন, খুলনার ডুমুরিয়া, বাগেরহাটের কচুয়া, নেত্রকোণার খালিয়াজুরি উপজেলা, যশোরের ঝিকরগাছা এবং পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় একজন করে নিহত হয়েছে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকালে উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের বিলে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পোদাউলিয়া গ্রামের জাহান আলি। নিহত আব্দুল মালেক পাটোয়ারী (৬০) উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
জাহান আলি বলেন, সকালে বাড়ির পাশের বিলে নিজের ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন আব্দুল মালেক। এ সময় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বৃষ্টি থামার পর অন্য কৃষকরা বিলে গেলে তাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
খুলনায় বজ্রপাতে মো. ওবায়দুল্লাহ গাজী (২৯) নামের এক মৎস্যচাষির মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়ার কোমলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওবায়দুল্লাহ গাজী ওই গ্রামের বাসিন্দা। ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের ফুফাতো ভাই আবু সুফিয়ান বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওবায়দুল্লাহ পাশের কানাইডাঙ্গা বিলে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। মরদেহ বাড়িতে আনা হয়েছে।
বাগেরহাট: জেলায় ঝড়ের তান্ডবে অন্তত দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কচুয়া উপজেলার চরসোনাকুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম লিকচান (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গাছ ও বিলবোর্ড পড়ে ১০ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা ৪০ থেকে ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলা ঝড়বৃষ্টিতে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন বলেন, আকস্মিক ঝড়ে বেশকিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এ সময় কচুয়া উপজেলায় বজ্রপাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ক্ষতিপূরণ নিরূপণের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
এদিকে, বাউফলে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে বৃদ্ধা এবং বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহত দুইজন হলেন- উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে রাতুল শিকদার (১৪) ও দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৮০)। নিখোঁজ জেলেরা হলেন- চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর অডেল এলাকার ইব্রাহিম ফরাজি এবং ইসমাইল রাঢ়ী। রোববার সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলে ঝালকাঠির আকাশ মেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসে। সেই সাথে বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ে। বেলা ১১টার দিকে জেলার পৃথক এলাকায় বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। নিহতরা হলেন, হেলেনা বেগম (৪০), মিনারা বেগম (৩৫) ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা (১১)।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, সকালে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে থাকা গবাদি পশুকে ঘরে আনতে যাওয়ার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে পৃথক স্থানে তিনজন নিহত হয়েছেন। ১১ বছরের নিহত শিশু মাহিয়া আক্তার ঈশানার বাড়ি সদর উপজেলার ইছালিয়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের রিকশাচালক বাচ্চু হাওলাদের মেয়ে এবং স্থানীয় আফছার মোমরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। অপর নিহত দুই গৃহবধূর মধ্যে হেলেনা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট এবং মিনারা বেগমের বাড়ি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামে। তারাও বৃষ্টিতে মাঠে থাকা গবাদি পশুকে বাড়ি আনতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন বলেছেন পরিবারের সদস্যরা।
বজ্রপাতে নেত্রকোণায় খালিয়াজুরী উপজেলার হাওরে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। নিহত ৫২ বছর বয়সী শহীদ মিয়া উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। খালিয়াজুরী থানার ওসি উত্তম কুমার সাহা জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহত শহীদ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোলায় ঘূর্নিঝড়ে প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক গাছপালা উপড়ে পড়েছে; নিহত হয়েছে একজন। রোববার দুপুরে সদর, মনপুরা ও লালমোহন উপজেলার ওপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায় বলে ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান। নিহত ৬৮ বছর বয়সী হারেস আহমেদের বাড়ি লালমোহন উপজেলার ফরাসগঞ্জ ইউনিয়নে।