বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া এলাকায় ভৈরব নদে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ভারি বর্ষণে নদ ধসে অন্তত ২০টি ভবন বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও অন্তত ৮০-৯০টি পরিবার। চার বছর আগে নদ খননের সময় ক্ষতার দাপট দেখিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যোগসাযশে সাবেক কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনের নেতৃত্বে চক্রটি অবৈধভাবে উত্তোলিত নদের হাজার হাজার ট্রাক বালু বিক্রি করে দেয়। তখন অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানালেও আমলে নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, নদের পাড়ে বাঁধ দেয়া না হলে এখনও যতটুকু আছে, সেসবও বিলীন হয়ে যাবে। শেষ আশ্রয়টুকু রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, ২০২০ সালে ভৈরব খননের সময় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সাবেক যুবলীগ নেতা জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনের নেতৃত্বে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাযশে শহরের পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া এলাকায় অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে হাজার হাজার ট্রাক বালু উত্তোলন করা হয়। বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। তাদের এই অবৈধ কাজে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো আপত্তি জানালেও আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। সেই সময় নিষেধ করা হলেও তারা জানিয়ে দেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এই কাজ করছেন। ওই সময় অবৈধভাবে হাজার হাজার ট্রাক বালি উত্তোলন করায় ভৈরবের এই এলাকায় ব্যাপক ভ্যাকুয়ামের সৃষ্টি হয়। এতে গতবছরের বৃষ্টিতে অল্প কয়েক জায়গায় ভাঙন হলেও এ বছর লাগাতার বৃষ্টিতে সেটি তীব্রতা পায়। ইতোমধ্যে ২০টির মত বাড়ি বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও অন্তত ৮০-৯০টি বাড়ি।
ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা এনায়েতুজ্জামান, মশিয়ার রহমান, শফিয়ার রহমানসহ অনেকেই জানান, আমরা সাবেক কাউন্সিলর টাক মিলন এবং পানি উন্নয় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বার বার অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনা কিছুতেই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করেনি। উল্টো আমাদের হুমকি দেয়া হয়েছে।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা রোববার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎকালে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, জোয়ার ভাটাবিহীন ভৈরব নদের পাড় ধসে ১৫-২০টি বাড়ি ভেঙে নদে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া নদের ধারে বসবাসকারী শতাধিক ব্যক্তির বাড়ির জায়গা, গাছপালা ভেঙে বিশাল খাদের সৃষ্টি হয়েছে।
নদের পাড়ে বসবাসকারী দরিদ্র ও অসহায় এসব মানুষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জীর কাছে তাদের অসহায়ত্ব তুলে ধরেন। তারা জানান, নদের পাড়ে বাঁধ দেয়া না হলে এখনও যতটুকু আছে, সেসবও বিলীন হয়ে যাবে। তাদের আশ্রয়টুকু রক্ষার দাবি জানান তারা।
সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন শহরের পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া ভৈরব পাড় এলাকার বাসিন্দা সায়েমা রহমান, শওকত আলী, সজীব ইসলাম, শামীমা জামান, শফিকুল ইসলাম, গৌতম রায়, রাফিয়া আক্তার মৌসুমী, খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।
তারা বলেন, ইতোমধ্যে ঘোষপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন, বারিক আলী, সজীব ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আমেনা বেগম, গোলাম মোস্তফা, সিদ্দিক হোসেন, কোহিনুর বেগম, মোহাম্মদ শাহিন, আলমগীরসহ কমপক্ষে ২০ জনের ঘরবাড়ি নদের মধ্যে ভেঙে তলিয়ে গেছে। শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, আমরা খুব শিগগিরই এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি। আমরা চাই, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দ্রুততম সময়ে নদের পাড়ে বাঁধ দেয়া হোক। একটা স্থায়ী সমাধানের জন্যে আমরা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে গত সপ্তাহে দরখাস্ত দিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
তারা বলেন, যাদের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে, সেই সমস্ত অসহায় দরিদ্র পরিবারের লোকজনের মাথা গোজার ঠাঁই যেন হয়, সেই লক্ষ্যে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, আমরা খুব শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। জিও ব্যাগের মাধ্যমে আপাতত পাড় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা করা হবে। আগামী বর্ষা মৌসুম আসার আগেই আমরা আরও কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবো।
কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সেটা বলতে পারছি না। তবে, কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে হবে- এটুকু বলতে পারি।