বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে ডিমের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে টাস্কফোর্সের অভিযানে আফিল এগ্রো ও চাঁদ এগ্রোসহ চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে শহরের বড়বাজার, চাঁচড়া ও আরবপুর মোড়ে টাস্কফোর্সের অভিযানে ডিমের ক্রয় বিক্রয় মূল্য যাচাই, রশিদ দেখা, মূল্য তালিকা প্রদর্শন ও যৌক্তিক মূল্যে ডিম বিক্রি তদারকি করা করা হয়। এ সময় অসঙ্গতি পাওয়ায় একজন খুচরা ব্যবসায়ী, একজন পাইকারি ব্যবসায়ী ও দুটি ডিম উৎপাদনকারি বড় প্রতিষ্ঠান আফিল এ্যাগ্রো ও চাঁদ এ্যাগ্রোকে জরিমানাসহ সতর্ক করা হয়। অভিযানে একজন খুচরা ব্যবসায়ীকে আটকও করা হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর যশোরের সবচেয়ে বড় ডিম উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান আফিল এগ্রোকে নিয়ম উপেক্ষা করে ব্যবসা পরিচালনার জন্য এক লাখ টাকা জরিমানাসহ সতর্ক করা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সব চেয়ে বড় ডিম উৎপাদনকারি এই প্রতিষ্ঠানটির নামে খুচরা বাজারে ডিম সরবরাহ না করার অভিযোগ ছিলো খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের। যে কারণে বাজারে ডিমের কৃত্রিম সংকট তৈরি হওয়ার সাথে সাথে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। খুচরা বাজারে জেলা প্রশাসনের অভিযানের সময় বাজারের প্রকৃত চিত্র ব্যবসায়ীরা তুলে ধরলে অভিযানিক দল শহরের চাঁচড়ার মোড়ে অবস্থিত আফিল এগ্রোতে অভিযান চারিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৪০ ও ৪৫ ধারা অনুযায়ী এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে। এসময় জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম ওই প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেন। উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে সিণ্ডিকেট করে খুচরা ও পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ না করার জন্য বলা হয় তাদেরকে।
এদিকে, শহরের আরবপুর মোড়ে অবস্থিত চাঁদ এগ্রো নামে ডিম উৎপাদনকারি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪০ ও ৪৫ ধারা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া শহরের খালধার রোড এলাকার পাইকারি ডিম বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আনিছ এন্টারপ্রাইজের মো. আনিছকে কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ১৯ এর ১(ড) ধারায় ১৫ হাজার টাকা ও শহরের বড়বাজারের মায়ের দোয়া নামে খুচরা ও পাইকারি ডিম বিক্রয় প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪০ ধারা মোতাবেক ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় মায়ের দোয়া ডিম বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের মালিক শরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালত অবমাননার জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
অভিযান পরিচালনার সময় জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আমরা অভিযোগ পেয়েছি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অধিক দামে মানুষকে ডিম কিনতে হচ্ছে। আমরা খুচরা, পাইকারি ও উৎপাদন পর্যায়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি কোনো কোনো সময় ১৫ টাকা পর্যন্ত ডিম কিনতে হচ্ছে। যশোরের সবচেয়ে বড় ডিম উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানটি নিজেরা উৎপাদন করছে আবার তারাই নিজস্ব মার্কেটিং কোম্পানি খুলে তাদের উৎপাদিত ডিম খুচরা দামে বিক্রি করছে। এতে করে বাজারে ডিমের সংকট তৈরি হচ্ছে। একজন উৎপাদনকারি তিনিই ডিস্ট্রিবিউটার, হোল সেলার এবং তিনিই রিটেইলর। এটা এক ধরনের সিন্ডিকেট। উৎপাদনকারি হিসেবে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকার ১১ টাকা ১ পয়সা এবং যারা কনজুমার তারা ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শাহীন, যশোরের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসনীম, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, ক্যাব যশোরের সহ সভাপতি আব্দুর রফিক, ছাত্র প্রতিনিধি তানজিত হাসান রিফাতসহ পুলিশ ও সেনাবাহিনির সদস্যরা।