বাংলার ভোর ডেস্ক
রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। সোমবার বিকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবউদ্দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ থেকে এটিই প্রথম উচ্চপর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর।
আর গত দুই দশকের মধ্যে কাতারের কোনো আমিরের বাংলাদেশে এটিই প্রথম সফর। সবশেষ ২০০৫ সালে কাতারের তখনকার আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশে এসেছিলেন।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরের সঙ্গে প্রথমে একান্ত বৈঠক এবং পরে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
এরপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে কাতারের আমিরের সৌজন্যে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন। বাংলাদেশে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সফরকে ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা’ হিসেবে দেখছে সরকার। তার এই সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে জানিয়েছেন পরারষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি রোববার বলেছেন, দ্বৈত কর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি, সাগর পথে পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি, পারস্পরিক উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি, বন্দিবিনিময় চুক্তি এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি হবে।
আর যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হবে, তার মধ্যে আছে- শ্রমশক্তি, বন্দর পরিচালনা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা খাতে সহযোগিতা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত।
সফরটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে। এই সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ কাতার হচ্ছে পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ সর্বোচ্চ গড় মাথাপিছু আয়ের দেশ। শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং কূটনৈতিক মধ্যস্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ হিসেবে পরিচিত কাতার। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজারও, যেখানে প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি কাজ করছে। পাশাপাশি এই সফর একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের উৎস হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
স্বাধীনতার পর থেকেই কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, “বন্ধুত্বের সম্পর্ক অনেক দিনের। কাতার বঙ্গবন্ধুকালীন সময়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র। ২০২৩ সালে কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আবারও সুদৃঢ় হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাতারের মহা মুহিম আমির বাংলাদেশ সফর করবেন। সম্প্রতি কাতারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগ এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি বিমান চলাচল, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কাতারের আমিরের সফরে বাংলাদেশে ইকোনমিক জোন করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান। তিনি বলেন, আমাদের সিরামিক আছে, আমাদের গার্মেন্ট প্রোডাক্ট আছে, আমাদের আরও অনেক এক্সপোর্ট আইটেম আছে, এগুলো রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বলব। এছাড়া আমাদের ওষুধ আছে। এগুলো এখনও রপ্তানি হয়, এগুলোর ভলিয়মটা আরও বাড়ানোর জন্য বলব। বাংলাদেশে যাতে তাদের ইনভেস্টমেন্ট হয়, বিশেষ করে আমাদের ইকোনমিক জোনে যাতে তাদের ইনভেস্টমেন্ট হয়- সেটাও আলোচনা করব। আমরা বিনিয়োগ চাইব, কাতার তো নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে, অর্থনৈতিক সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারে।
রাজধানীতে একটি সড়ক ও পার্কের নামকরণ করা হচ্ছে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নামে। মিরপুরের কালশীতে বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কটি কাতারের আমিরের নামে নামকরণ করা হবে।
মঙ্গলবার নিজে উপস্থিত থেকে এ দুই স্থাপনা উদ্বোধন করার থাকলেও ‘সময়ের অভাবে’ কাতারের আমিরের যাওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বা ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কাতার আমিরের না যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “কাতারের আমির তার নামে যে রাস্তা উদ্বোধনের কথা সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানেও তিনি যেতে পারছেন না। তার নামে রাস্তা উদ্বোধন হবে এবং সেটি ঢাকার মধ্যে, মিরপুরের কালশীতে। সেখানে প্রথমে তার যাওয়ার কথা ছিল, সেটিও তিনি বাতিল করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি না হওয়ার কথা জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “তিনি খুব কম সময়ের জন্য আসছেন, খুবই টাইট শিডিউল। সে কারণে অনেক জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সেগুলো হচ্ছে না।