বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দীর্ঘ ৩৭ বছর পর লেবুতলার এলাকার মানুষ ফিরে পেয়েছেন সরকারি রাস্তা। বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় যশোর জেলা প্রশাসক এবং সহকারী কমিশনার ভূমি’র নির্দেশে লেবুতলা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে রাস্তার সীমানা লাল পতাকা উড়িয়ে চিহ্নিত করা হয়।
জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের বীরনারায়নপুর গ্রামে ২.২৭ একর জমি সাধারণের চলাচলের রাস্তা হিসেবে একাধিকবার প্রমাণিত হলেও স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির তঞ্চকতার মাধ্যমে তা রেকর্ড করে নেয় যা গত (২৬ মে) ৮৪/ঢষষষ/ ২০২২-২৩ নং মামলার আদেশ মোতাবেক রেকর্ড সংশোধন করে সরকারের পক্ষে যশোর জেলা প্রশাসকের নামে ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়।
এদিকে, দীর্ঘ তিন যুগ পর চলাচলের রাস্তা ফিরে স্থানীয় কৃষকরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ রাস্তার দুইপাশ দিয়ে সবজি চাষসহ কয়েকশ’ বিঘা জমিতে ধানের চাষ হয়। বীর নারায়নপুর গ্রামের ১৪৩ নং মৌজার ২৬নং দাগের সরকারি রাস্তাটি বীর নারায়নপুর বাইপাস সড়কের নন্দ ঘোষের জমির পাশ দিয়ে শর্শনাদাহ গ্রামের ইব্রাহিম বিশ্বাসের সবজি ক্ষেত হয়ে মোল্যাপাড়ার ব্যক্তিগত ইটের রাস্তা দিয়ে আবারও ঈদগাহের সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় কিলোমিটার। যেটি গতকাল লাল পতাকা টাঙিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শর্শনাদাহ গ্রামের জাফর জানান, আমরা ত এ রাস্তার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কোনদিন ভাবিনি এ রাস্তা আবার ফিরে পাবো। এই দুই গ্রামের সংযোগ পথ বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা দখল হওয়ার কারণে। শত শত বিঘা সবজি এবং ধান উঠানো এ রাস্তা দিয়ে খুবই সহজ হয়ে যাবে। সরকারের নিকট আমার দাবি দ্রুত যেন এ রাস্তাটি মাটি দিয়ে বাধা হয়।
লেবুতলা গ্রামের রাজকুমার জানান, রাস্তা হওয়ায় হাজারো মানুষ প্রাণে বেঁচেছে। কারণ এ রাস্তা বন্ধ হওয়ায় মাঠের চাষাবাদ করার মত কোন উপায় ছিলনা।
বীর নারায়নপুর গ্রামের নিমাই ঘোষ জানান, রাস্তা যেহেতু হয়ে গেল খুবই আনন্দের বিষয়। তবে এখন রাস্তায় চলাচল করার উপযোগী হওয়া প্রয়োজন। এবার ধান আর সবজি নিয়ে কষ্ট করতে হবে না। সহজে উঠানো যাবে।
শর্শনাদাহ গ্রামের সবুর আলী জানান, রাস্তা বন্ধ থাকায় এতদিন ধরে মাথায় করে সবজি বয়ে বাজারে নিতে হতো। এখন আর তা করতে হবে না। সহজেই বাজারে নিয়ে যেত পারবো আমাদের ক্ষেতের সব্জি। এতে করে কষ্ট যেমন কমবে তেমনি আমাদের লাভও বাড়বে।
বীরনারায়নপুর গ্রামের ইসমাইল জানান, আমি প্রথমে ২০১৯ সালে সাংবাদিকদের এনে মানববন্ধন সহ এলাকার মানুষের গণস্বাক্ষর নিয়ে যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করি। এতে করে এলাকার বিভিন্ন মহলের গালিগালাজ এবং বিভিন্ন হুমকি-ধমকির মধ্যেও পড়তে হয়েছে। এখনো অনেকে বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে।
লেবুতলা ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, যেকোন ভাবে সরকারি রাস্তা ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হয়েছিল। সেটা সরকার দেরিতে হলেও জানতে পেরে গত (২৬ মে) যশোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি’র আদেশে ১নং খাস খতিয়ানে আনা হয়েছে। এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে রাস্তার উপর লাল পতাকা দিয়ে স্থানীয় সার্ভেয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং এলাকাবাসীকে লাল পতাকা না উঠানোর জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ফুলবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের এসআই এবং ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে অবগত করা হয়েছে।