♦ সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে পানি পাচ্ছেন না শ্রমজীবী মানুষ
♦ ২৯ টি নলকূপের ১ টি সম্পর্ণ এবং ১২ অর্ধেক অকেজো
♦ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম ৫৩ লাখ লিটার
স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোরে চলমান তাপপ্রবাহে চাহিদার তুলনায় কমেছে পানি সরবরাহ। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন পৌর নাগরিকবাসি। এদিকে, যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তিব্র তাপদাহে এখনও পর্যন্ত পানি সরবরাহে বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা চালু করেনি। যে কারণে পানির প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে ভোগান্তি বাড়ছে পৌরসভা থেকে সাপ্লাই পানি নিয়ে ব্যবহার করা নাগরিকদের। এদিকে শ্রমজীবী মানুষরা সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে পানি পাচ্ছেন না। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই সাপ্লাই পানি সরবরাহের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে যাদের পানি ধরে রাখার বিকল্প ব্যবস্থা নেই তারা পড়ছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।
বুধবার যশোর পৌরসভার পানি ও পয়ঃনিস্কাশন শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২৯ টি উৎপাদক নলকূপের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৭শত ৭ জন গ্রাহককে পানি সরবরাহ করা হয়। উৎপাদক ২৯ টি নলকূপের মধ্যে ১টি সম্পূর্ণ অকেজো এবং ১২ টি ৫০ শতাংশ অকেজো। অর্থাৎ ১৬টি উৎপাদক নলকূপ শতভাগ কার্যকর রয়েছে। কিছুদিন আগে দৈনিক পানির চাহিদা ছিলো ২ কোটি ৫১ হাজার ৩শত লিটার। বর্তমান সময়ে চলমান তাপদাহে সেই চাহিদা ৫০ লাখ লিটার বেড়ে এখন ২ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৩ শত লিটার হয়েছে। পানির চাহিদা বাড়লেও তুলনামূলক উৎপাদন বাড়েনি। বর্তমানে ৩০ লাখ লিটার পানি উৎপাদন বেড়ে মোট উৎপাদন ১ কোটি ৯৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫ শত লিটার হয়েছে। এতে করে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫৩ লাখ লিটার পানি সরবরাহ কম হচ্ছে। যদি পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে আগের তুলনায় পানি সরবরাহের সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার পানি শাখার সুপারভাইজার প্রদত্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে রোজার আগে যেখানে সকাল ৬ টা সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত পানি সরবরাহ করা হতো। আর বর্তমানে সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত এ পানি সরবরাহ করা হয়। এতে করে দেখা যাচ্ছে সরবরাহ সময় কমেছে প্রায় আধা ঘন্টা।
এদিকে এ খাতে বিদ্যুত বিল বাবদ খরচ বেড়েছে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে সাপ্লাই পানি সরবরাহের জন্য প্রতিমাসে পৌরসভার বিদ্যুত বিলের খরচ দেখানো হয়েছে ১৯ লাখ টাকা। মাসিক মেরামত খরচ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার অধিক। পৌরসভার পানি সরবরাহ ও পানির মান নিয়ে অখুশি ব্যবহারকারি নাগরিকরা। ইসতিয়াক হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, সারাদিন রিক্সা চালিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি গিয়ে গোসল করার মত পানি পাই না। মাসে মাসে পানির বিল দিলেও পানি ঠিকমত পাই না। এক বালতি পানি ভরতে ১০ মিনিট সময় লাগে। পানির চাপপ্রবাহ খুব কম।
এ বিষয়ে পৌরসভা পানি শাখার সুপার ভাইজার ইসাহক হোসেন বলেন, পৌরসভার সাপ্লাই পানির মান ভালো। পানি সাড়ে ৪ ফুট মাটির নিচে দিয়ে যায় তাপে গরম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। পানির চাহিদা বেড়েছে আমরা সিস্টেমে পানি যতটুকু বাড়ানো যায় বাড়িয়েছি। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
যশোর পৌর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, যশোর পৌরসভা যে পানি সরবরাহ করছে তা ব্যবহার উপযোগী না। এই পানি ব্যবহার করে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পানির গতি নেই, মান নেই। ট্যাপ ছাড়লে টিপটিপ করে পানি আসে। আমরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েছি তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই গরমে ঠিক মত পানি পাচ্ছে না পৌরবাসী। পানির এই সমস্যা সমাধান না করলে আমরা পৌর নাগরিক কমিটি আবার আন্দোলনে নামবো।
যশোর পৌরসভার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন শাখার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহম্মেদ বলেন, আমরা পাম্প আওয়ার বাড়িয়েছি। আমাদের পানির খুব বেশি সমস্যা নেই। কয়েক জায়গায় টুকটাক সমস্যা আছে তা ছাড়া বড় কোনো সমস্যা নেই। প্রায় সব পাম্প চালু করেছি। পাম্প চালু রাখার কারণে আমাদের বিদ্যুৎ বিলও বেশি উঠছে।