♦ দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে আটকে আছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি
♦ দু’পক্ষের আলাদা কর্মসূচি
♦ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হচ্ছে না
হাসান আদিত্য
এক বছর আগে যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের চাপের মুখে কমিটি ঘোষণা না করেই সম্মেলন শেষ করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনের তিন মাস পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিদ্যমান দুটি ধারা থেকে দুই নেতাকে সভাপতি-সম্পাদক করে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু ওই কমিটির মেয়াদ আট মাস পেরিয়ে গেলেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। দুই সদস্যের কমিটিতে খুড়িয়ে চলছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যক্রম। হতাশা বাড়ছে পদপ্রত্যাশীদের মাঝেও। কবে নাগাদ কমিটি ঘোষণা করা হবে, সেটিও কেউ নিশ্চিত নয়।
নেতাকর্মীরা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। অন্যটি যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ কাজী নাবিল আহমেদ। জেলার এই শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে ক্ষমতা দখলের অসম প্রতিযোগিতার কারণে পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনের গতি। পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। এই ক্ষোভের মধ্যে দিয়ে আজ শনিবার জেলায় পালিত হবে সংগঠনটির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই উপলক্ষে দু পক্ষই পৃথক পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ পর ২০২৩ সালের ১২ জুলাই যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটি ঘোষণা না করে কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলার শীর্ষনেতারা যশোর সার্কিট হাউজে সভাপতি সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নাম নিয়ে যাচাই বাছাই করে। সেখানে জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় কমিটি ঘোষণা না করেই চলে যান কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে সম্মেলনের তিন মাস পর ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর যশোর জেলা শাখার দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয়। নতুন কমিটির সভাপতি পদ পান আগের কমিটিতে ১৭ বছর সভাপতির দায়িত্বে থাকা আসাদুজামান মিঠু। এ পদে ছয় প্রার্থী থাকলেও আগের সভাপতিকে বহাল রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পদপ্রত্যাশীরা। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য নাবিল আহমেদের অনুসারী। আর সাধারণ সম্পাদক হন নতুন মুখ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম নিয়ামত উল্লাহ। তিনি শাহীন চাকলাদারের অনুসারী।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি করেন এমন জেলার ১০জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সদ্য শেষ হওয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই দুই নেতার রাজনীতির পট পরিবর্তন হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে শাহীনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে দীর্ঘদিন পর শক্ত অবস্থান ফিরেছেন তিনি। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বি স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল সমর্থিত প্রার্থী ভোটে হেরে যাওয়ায় রাজনীতিতে তার অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই নেতাই চাইছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিজ অনুসারীদের বসিয়ে সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার। ফলে নাবিল অনুসারী সভাপতি আসাদুজামান মিঠু তার অনুসারী স্বেচছাসেবক লীগের নেতাকর্মী নিয়ে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করছেন।
অন্যদিকে শাহীন অনুসারীর সাধারণ সম্পাদক নিয়ামত উল্লাহও তাদের অনুসারীদের নিয়ে প্রস্তাবিত কমিটি প্রস্তুত করছেন। ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার এ বিলম্বের জন্য সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার বিরোধ ও সমন্বয়হীনতাই দায়ী করছেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। জেলার কমিটির সঙ্গে সংগঠনটির আট উপজেলার কমিটিগুলোর বেশির ভাগ মেয়াদউত্তীর্ণ। জেলা নেতৃত্ব শক্তিশালী বা চাঙ্গা না থাকাতেও উপজেলার কমিটিগুলো এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন সাবেক জেলা ছাত্রলীগনেতা মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘জেলা কমিটির যিনি সভাপতি আছেন, তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে আজও সভাপতির চেয়ার আঁকড়ে আছেন। ফলে নতুন নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়নি, ফলে সংগঠনটির গতিশীলতা বাড়েনি। আর সাধারণ সম্পাদক যিনি হয়েছেন তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারী। সভাপতি-সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের দুই বলয়ের। দুইজন দুই বলয়ের কারণে সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব। তারা এখনো পর্যন্ত এক জায়গাতে হয়নি। ফলে কমিটি এখনো ঝুলে রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত কমিটি পূর্ণাঙ্গ হোক।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘আংশিক কমিটি ঘোষণার পর সংসদ নির্বাচন, এর পর উপজেলা নির্বাচন হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব স্বেচ্ছাসেবক লীগে নেই। দলীয় কর্মসূচি ভোট ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সভাপতির সঙ্গে বসা হয়নি। তবে দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘যশোর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপজেলাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না, যুবলীগের সম্মেলন হচ্ছে না। এসব নিয়ে আগে নিউজ করেন। এগুলো কমিটি হলে পরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিও হবে। তিনি এই প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন, দেশে এখন যেসব ইস্যু চলছে সেসব নিয়ে নিউজ করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হচ্ছে না এসব তেমন কোন নিউজ না।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘দলে কোন দ্বন্দ্ব নেই। সবাই শেখ হাসিনার রাজনীতি করেন। কি কারণে পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না জানি না। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা এসেছে দলকে গতিশীল করতে হবে। ইতোমধ্যে শ্রমিক লীগের সম্মেলন করেছি। পর্যায়ক্রমে সব সংগঠনে গতিশীলতা আনতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে সাথে নিয়ে আমরা বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের মতবিনিময় করছি।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ দু’পক্ষে :
আজ সংগঠনটির ৩০ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুটি পক্ষেই পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শাহীন চাকলাদার অনুসারীদের সকালে শহরের গাড়িখানাস্থ দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নেতাকর্মীদের নিয়ে শোভাযাত্রা। এরপর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে কেক কাটা ও আলাচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন। প্রধান বক্তা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
অন্যদিকে নাবিল অনুসারীদের শোভাযাত্রা, শ্রদ্ধা নিবেদন রক্তদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে আলোচনা ও কেককাটার কর্মসূচি থাকলেও গতকাল বিকেল পর্যন্ত স্থান ও অতিথি নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান সভাপতি আসাদুজামান মিঠু।