বাংলার ভোর প্রতিবেদক
গত কয়েকদিন ধরে যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। লাগাতার দাবদাহে অতিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষ। তীব্র গরমে কমে গেছে রাস্তাঘাটে লোকজনের উপস্থিতি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বলেন, ‘শুক্রবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’ তাপমাত্রা অত্যধিক হলেও গত দু’দিন আগের চেয়ে কম অনুভূত হচ্ছে, এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ‘সূর্য কিরণের তীব্রতা একটু কম এবং আকাশ মেঘলা থাকায় আগের চেয়ে তাপ একটু কম মনে হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার প্রভৃতি এলাকায় বৃষ্টিপাতের কারণে কিছুটা ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। সে কারণে মানুষের শারীরিক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি একটু কমেছে।’
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যশোরে গরম একটু কম অনুভূত হচ্ছে বলে জানান শ্রমজীবী মানুষরা। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর শহরের মুজিব সড়কে চলাচলকারী রিকশাচালক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘গতকাল এবং আজকে গরম একটু কম লাগছে। আগের মতো পুড়ে যাচ্ছে না। সকাল ৮টায় রিকশা নিয়ে বের হই এবং বেলা ১২টা পর্যন্ত চালাই। আবার দুপুর ৩টার পরে বের হয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রিকশা চালাই। এই সময়কালে যা উপার্জন হয় তাতে মহাজনের টাকা দিয়ে কোনোমতে নিজের সংসার চলে।’
সিরাজুল ইসলাম নামে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা এত বেশি যে শরীরে ঘামাচি ভরে গেছে। দিনভর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়, শরীর পুড়ে যায়। একটু বৃষ্টি হলে স্বস্তি আসতো।’
এই গরমে কাঁধে বাক নিয়ে ঘোল বিক্রি করছেন অমল ঘোষ নামে একজন পৌঢ়। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ কেজি ঘোল বিক্রি করেন তিনি। অমল বলেন, ‘২০ কেজি দুধে ১৫-১৬ কেজি ঘোল এবং তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ গ্রাম মাখন তৈরি হয়। ঘোল প্রতি গ্লাস ২০ টাকা এবং মাখন ১০০ গ্রাম ১২০ টাকায় বিক্রি করেন। দিনশেষে ৬-৭শ’ টাকা থাকে।’ অন্য সময়ের চেয়ে এই গরমে ঘোল একটু দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়, জানান তিনি।
এদিকে, তৃষ্ণার্ত পথচারী ও শ্রমজীবী মানুষের পিপাসা মেটাতে আজও শহরের মুজিব সড়কে পানীয় জল এবং শরবত পান করান যশোর জেলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও বন্ধু ৯০ ব্যাচের সদস্যরা।
যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘এই সময়ে ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে। প্রচণ্ড গরম থেকে মুক্তি পেতে কেউ যেন ডিপ ফ্রিজের পানি পান না করেন। এ সময় প্রচুর পানি, ডাবের পানি, দেশি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন।’ খুব প্রয়োজন না হলে রোদে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।