♦গণভবনে ছাত্র-জনতা
♦‘জরুরি অবস্থা নয়, সেনারা গুলি চালাবে না’
♦প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন,
বাংলার ভোর ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। সোমবার দুপুরে তিনি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে ভারতে চলে যান। এরপর সেনা প্রধান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান। সেনাবাহিনী দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে। এদিকে, শেখ হাসিনার পলায়নের পরপরই হাজারো ছাত্র-জনতা গণভবনে ঢুকে পড়েন। এতে করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় আন্দোলনকারীদের।
জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তর্র্বতী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সোমবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন।
জনগণের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখেন, একসঙ্গে কাজ করি। দয়া করে সাহায্য করেন। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পাবো না। সংঘাত থেকে বিরত হোন। সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়ি।
সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শিক্ষক আসিফ নজরুল ও জোনায়েদ সাকিও বৈঠকে ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারফিউ থাকবে না। আমি নির্দেশ দিয়েছি সেনাবাহিনী গুলি চালাবে না। পুলিশ গুলি চালাবে না। আপনারা ধৈর্য ধরুন। আমাকে সাহায্য করুন।
তবে দুয়েকদিন সময় লাগতে পারে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাপ করবে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমরা এখন বঙ্গভবনে যাবো। সেখানে অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তিনি ছাত্রদের শান্ত হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আজকের রাতের মধ্যে আমরা একটা সলিউশন করবো।
দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সোমবার ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ সফল করতে রাজধানীর রাস্তায় নেমে এসেছে লাখো মানুষ। অনেকে হাতে পতাকাসহ স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে নিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান। সেই সময় পর্যন্ত দেশের সব নাগরিককে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই মুহূর্তে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান। ইতোমধ্যে গণভবনে ঢুকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। তাদের গণভবনের মাঠে হাত উঁচু করে উল্লাস করতে দেখা গেছে। তারা সেখানকার বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতে নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।
গণভবনে ছাত্র-জনতা
সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে উল্লাস করছেন সর্বস্তরের জনগণ। এ সময় গণভবনের পশ্চিম পাশের গেট দিয়ে উৎসাহিত জনতা ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানের উল্লসিত ছাত্র-জনতার স্রোত দেখা যায়।
সোমবার সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ সফল করতে রাজধানীর রাস্তায় নেমে আসেন লাখো মানুষ। এদিন সকালে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নেয়। তবুও বিভিন্ন দিক থেকে ঢাকামুখি জনস্রোত থামানো যায়নি। পরে দুপুর ৩টায় জাতির উদ্দ্যেশে সেনাপ্রধানের ভাষণের ঘোষণা দেন। তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তারপরই শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে জনগণ বাসাবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। আন্দোলনকারী জনতাও গণভবনের অভিমুখী হতে থাকেন। এরপর দুপুর প্রায় ৩টার পর গণভবনে জনতারা জড়ো হয়ে উল্লাস করতে থাকেন। তাদের একাংশ গণভবনের মাঠে ঢুকে যায়। তাদের হাত উঁচু করে উল্লাস করতে দেখা গেছে। তারা সেখানকার বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতে নিয়ে নানানরকম স্লোগান দিচ্ছেন। কেউ কেউ জিনিসপত্র বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ভারতের আগরতলা চলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ ত্যাগের খবরের পরপরই গণভবনে সাধারণ মানুষ ঢুকে পড়ে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি সে সুযোগ পাননি।
‘জরুরি অবস্থা নয়,
সেনারা গুলি চালাবে না’
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। তবে দেশে কোনও জরুরি অবস্থা জারি হবে না বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি শান্ত হলে কোনও জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। সেনারা গুলি চালাবে না। সোমবার জাতির উদ্দেশে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওয়াকার উজ-জামান বলেন, আমরা একটি অন্তবর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করবো। আমি কথা দিচ্ছি সব হত্যা ও অন্যায়ের বিচার আমরা করবো। দেশবাসীকে উশৃঙ্খল না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি বিশ্বাস রাখেন। আপনাদের সব দাবি আমরা মেনে নেবো।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী গুলি চালাবে না। পুলিশও গুলি চালাবে না। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। আজ রাতের মধ্যেই আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেবো। তবে দুয়েকদিন সময় লাগতে পারে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা ও বিশিষ্ট জনের বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আমির, গণসংহতি আন্দোলনে সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল। তবে বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না।