নাজমুল হুদা
‘১৯৭০ সালে প্রথম এই স্কুলে প্রথম পদার্পণ করেছিলাম। সেই সময়ের অনুভূতি আর এখনকার অনুভূতি ভিন্ন। আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে ফিরে গেলাম ৭০ এর দশকে। শহরের চোরমারা দীঘিরপাড় থেকে হেঁটে হেঁটে স্কুলে আসতাম। পড়াশোনা না পারলে স্যারদের বেত্রাঘাত। পরে আবার আলাদা ডেকে আদর করা। সেই স্মৃতিটা আজকে খুব বেশি মনে পড়ছে। স্যারদের প্রতি ছিল আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা। বারবার তাকাচ্ছি পুরনো সব ভবনের দিকে। আমার সেই ক্লাস রুমের দিকে। আগে যেমন ছিলো, এখন তেমনটা নেই। অনেক স্থপনা বেড়েছে। এই বয়সে অনেক নবীন প্রবীণদের দেখে ভালো লাগছে।’ যশোর জিলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে গতকাল বিকেলে ঝিনইদহ-৩ (মহেশপুর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সালাহউদ্দি মিয়াজী এসব কথা বলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৮৩৮ সালে যশোর জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘নবীন-প্রবীণ এক প্রাণ’ এ স্লোগান সামনে রেখে যশোর জিলা স্কুলের ১৮৬ বছর উদযাপন ও প্রাক্তন ছাত্র পুনর্মিলনী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপি মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারসহ অতিথিরা ১৮৬ টি বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। যশোর জিলা স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের টাইটেল স্পন্সর ফ্যাশান ব্যান্ড সেইলর।
স্মৃতিচারণ করে ১৯৬০ ব্যাচের ছাত্র গোলাম ফারুক বলেন, ‘অনেক বয়স হয়ে গেছে। জানি না কতদিন আর বাঁচবো। এমন আয়োজন যেন আমাকে আরও বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখার প্রেরণা জোগাল।’ একই ব্যাচের মেজর জেনারেল জামিল ডি এহসান বলেন, ‘এই মিলন মেলায় একই সঙ্গে স্কুলের চেনা-অচেনা অনেককে দেখতে পেয়ে আনন্দ লাগছে।’
যশোর মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘এ আয়োজন ঘিরে যে প্রাণের স্পন্দন তৈরি হয়েছে, সেটি আমাকে স্পর্শ করছে। এমন আয়োজন জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। এ বন্ধন যেন ভবিষ্যতেও অটুট থাকে।’
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল বলেন, ‘পুনর্মিলনীতে এসে মনে পড়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ে পড়ার সেই ছোটবেলার স্মৃতিগুলো। আমরা যেদিন বিদায় নিয়েছিলাম, সেদিন সহপাঠীদের বলেছিলাম, আবার দেখা হবে। কিন্তু বাস্তবতার কারণে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি। স্কুল জীবনের একটি ঘটনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘স্কুল বন্ধ করতাম খুব। পরের দিন স্কুলে এসে বলতাম স্যার অসুস্থ ছিলাম। প্রায় অসুস্থতার কথা বলে স্কুল বন্ধ করতাম। পরবর্তীতে শ্রেণি শিক্ষকের কাছে মার খেয়ে স্কুল বন্ধ করা বাদ দিয়েছিলাম। পুনর্মিলনীতে এসে আবার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। সত্যিই নস্টালজিক হয়ে পড়েছি আমরা।’
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক বলেন, ‘বহু বছর পর বিদ্যালয়ের পরিচিত মুখগুলো একসঙ্গে আজ। ছোটবেলার সেই রঙিন দিনগুলো বারবার মনে পড়ছে। এই মিলনমেলা যেন আমাদের সামনে এগিয়ে চলার শক্তি আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’ জিলা স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থী অর্জন বলেন, ‘এ স্কুলে আমার দাদা পড়েছে, বাবা চাচারা পড়েছেন, আমি পড়ছি, আমরা ছোট ভাইও পড়ছে। নবীন প্রবীণদের একসাথে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।’
অননুষ্ঠান উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী স্কুলটির সেই পুরনো মাঠে টাঙানো হয়েছে বিশাল সামিয়ানা। বসানো হয়েছে বড় মঞ্চ। আলোকসজ্জায় সেজেছে পুরো উৎসবস্থল। মাঠের একপাশে রয়েছে পিঠার স্টল। পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে সবাই কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত। একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন। কেউ খুলেছেন গল্পের ঝাঁপি। অনেকেই গল্প করছেন আর বিভিন্ন স্বাদের পিঠা খাচ্ছেন। নবীন প্রবীণ শিক্ষার্থীরা এই অনুষ্ঠানে এসে যেন ফিরে গিয়েছিলেন সেই ছোটবেলার সোনালি দিনগুলোতে। স্কুল প্রাঙ্গনে প্রাক্তনদের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছিল, ‘বন্ধু, কী খবর বল, কত দিন পর দেখা’, ‘এই মাঠেই তো খেলে বেড়াতাম, আজ চেনাই যায় না’ তারা বলছিলেন মনের গহিনে জমে থাকা নানা কথা। অনুষ্ঠানে সেনা কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত দুই হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র ও তাদের স্বজনেরা উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা শৈশবের স্মৃতিচারণা আর দীর্ঘদিনের জমানো কথা বলে জমজমাট আড্ডায় মেতে ওঠেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ঝিনইদহ-৩ (মহেশপুর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সালাহউদ্দিন মিয়াজী, যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন, যশোর জিলা স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতি ঢাকার সভাপতি এএম জাকারিয়া মিলন, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়েব আলী। সমিতির সভাপতি এ জেড এম সালেকের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন চৌধুরী। শোক প্রস্তাব করেন সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এসএম তৌহিদুর রহমান। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব । রাতে নৈশভোজের মাধ্যমে প্রথমদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। আজ সকাল থেকে রাতের অনুষ্ঠানসূচিতে রয়েছে শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণা, আড্ডা, প্রাক্তন শিক্ষক সংবর্ধনা ও বর্তমান শিক্ষক পরিচিতি, বৃত্তি প্রদান, পৃষ্ঠপোষক সম্মাননা, র্যাফেল ড্র, আতশবাজি। শেষে সাংস্কৃতিক পর্বে সংগীত পরিবেশন করবেন বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইল্স্।
শিরোনাম:
- যশোর মটর পার্টস সমিতির নির্বাচনে ৫৫ জনের মনোনয়নপত্র জমা
- লোকসমাজের প্রকাশক সুমিতের শ্বশুরের ইন্তেকাল, দাফন সম্পন্ন
- বাংলার মিলন মেলার লোগো উন্মোচন ও নিবন্ধন কার্যক্রম উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত যশোরবাসী
- বৈষম্যমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে কাজ করছে জাকের পার্টি : মহাসচিব
- চুকনগর বণিক সমিতির নির্বাচনে সাহিদুল সভাপতি বিল্লাল সম্পাদক
- কদমতলা বাজার কমিটির আইয়ুব সভাপতি, রফিকুল সম্পাদক
- সাতক্ষীরায় পাচারকালে দুই পিস স্বর্ণের বারসহ আটক ১