বাংলার ভোর প্রতিবেদক
১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচির আগে যশোরে ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, গত তিনদিনে আটক এসব নেতাকর্মীরা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন ও বিভিন্ন নাশকতা কর্মকাণ্ড সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। আটকদের নাশকতা ও পূর্বের বিভিন্ন মামলায় আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠানানো হয়েছে।
এদিকে, লকডাউন কর্মসূচিতে ঘিরে যশোরে তৎপর রয়েছে যশোরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনীতিক দলের নেতাকর্মীরাও। মোড়ে মোড়ে অবস্থানের সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচি প্রতিহতের।
আজ বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলার রায়ের দিন নির্ধারণের সম্ভব্য দিন। দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির কয়েক নেতা অনলাইনে নাশকতা সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে রাজধানীতে একাধিক স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। আশঙ্কা রয়েছে, দেশের অন্যান্য স্থানেও একই ধরনের ঘটনা ঘটার। কেন্দ্রীয় নেতাদের মতো যশোরেও মধ্যমসারীর নেতাকর্মীরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দিচ্ছেন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠন আওয়ামী লীগের ডাকা লকডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে সারাদেশের মতো যশোরের পুলিশও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নিষিদ্ধ এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা বা চোরাগুপ্তা হামলা করতে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। যদিও ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। যশোরে ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলার ও যুবলীগ নেতা আলমগীর কবির ওরফে হাজী সুমনের উদ্যোগে শহরে ঝটিকা মিছিল হয়েছে। এ সময় তারা ‘শেখ হাসিনা আসবে-বাংলাদেশ হাসবে’, ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই- রাজপথ ছাড়ি নাই’ অবৈধ সরকার মানিনা মানবোনা, শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার স্লোগানের পাশাপাশি নানা স্লোগান দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মিছিলে ৩০ থেকে ৩৫ জন কিশোর-যুবক অংশ নেয়। মিছিলকারীদের অধিকাংশই মুখে মাস্ক ছিল। অনেকেই ছিলেন হেলমেট পরিহিত। এর আগে চাঁচড়ায় ছাত্রলীগ মিছিল বের করে। সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আতিকুর বাবুর ব্যানারে মশাল মিছিল বের করা হয়। এসব কর্মসূচির ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন নেতাকর্মীরা। তবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে যশোর জেলা পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করতে না পারলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ছবি দেখে জড়িতদের আটক করছে পুলিশ। গত ১০ নভেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশের সূত্র বলছে, গত সোমবার সকালে পুলিশ সুপার রওনক জাহান জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে সর্বত্র সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবুল বাশার জানিয়েছেন, নিষিদ্ধঘোষিত ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠনের নেতাকর্মীরা যাতে কোনো প্রকার অপরাধ করতে না পারে সে জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে। শহর ও উপজেলাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মোড়, বাজার, রাস্তাঘাট, বিশেষ ভবন, গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালতগুলোর সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। এই অঞ্চল থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীদেরও ভিডিও করা হচ্ছে। যশোর শহরের মণিহার এলাকায় পুলিশের একটি টিম এই কাজ করছে। পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে তল্লাশী চৌকি বসিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। অতিরিক্ত পেট্রোল টিম অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
এদিকে দেশে অস্থিরতার নামে নানা কর্মসূচি ঘোষণার বিরুদ্ধে রাজপথে রয়েছে যশোরের রাজনৈতিক দলগুলো। বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদেরকে শহরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাকর্মীরাও শহরে সজাগ রয়েছেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাতে দড়াটানায় বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। মাঠে কোন কর্মসূচিতে না থাকলেও আওয়ামী লীগের অস্থিরতার জবাদ দিতে যশোরের জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাজিদুর রহমান সাগর বলেন, ‘সারাদেশে গুম, খুন,সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও বিদেশে অর্থ পাচার করে দেশকে ধ্বংস করেছে। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তারা বার বার ক্ষমতায় এসেছে। নির্বিচারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছে। এতে করে দেশের জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। তারপরেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশে অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র, নাশকতা ও সহিংসতা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের নাশকতা ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। জনগণকে সাথে নিয়ে ফ্যাসিস্টদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে।’ এনসিপির যশোরের প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। দেশে আগুন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এই সস্ত্রাসী, ফ্যাসিস ও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে এনসিপি। শুধু আওয়ামী লীগ না; সকল ষড়যন্ত্রকারীদের জবাব দিতে জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে থাকবে এনসিপির সকল নেতাকর্মীরা। জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন জানান, ‘জামায়ত সকল ষড়যন্ত্রকারীদের বিপক্ষে। দেশে নিয়ে যারা জ্বালাও পোড়াও ষড়যন্ত্র করবে; তাদের মোকাবেলা করবে জনগণকে সাথে নিয়ে।’
