বাংলার ভোর প্রতিবেদক
মিডফোর্ড, খুলনা, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং ক্রমবর্ধমান চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিবাদে যশোর শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ও বিকালে চারটি ভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে সাধারণ ছাত্র-জনতাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
এদিন, সকালে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে সাধারণ ছাত্র জনতার ব্যানারে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা তসলিম উর রহমান, ইমরান খান, জাহিদ আব্বাস, ফরহাদ শেখ, খান জাহান আলী শান্ত, হারিস, মামুন রহমান প্রিন্স, রুবাইয়া খন্দকার, তারেক হোসেন, আবু সাইদ প্রমুখ।
বক্তারা পাথর দিয়ে মানুষ হত্যার মতো বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের (মব) দৌরাত্ম্য, ক্ষমতার প্রতি সীমাহীন লোভ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিই এ ধরনের নৃশংসতার মূল কারণ।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া চাঁদাবাজি সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘মব’-এর মতো ঘটনা প্রায়শই ঘটছে, যা সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাজনক। একইসাথে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী আইনের ঊর্ধ্বে উঠে একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছে। এসব ঘটনার পরে অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বা দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে না। যা সমাজে বিচারহীনতার জন্ম দিচ্ছে এবং অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে।
বক্তারা অবিলম্বে মিডফোর্ড, খুলনা, চাঁদপুরসহ দেশের প্রতিটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, যদি দ্রুত এ সকল ঘটনার বিচার নিশ্চিত না হয়, তবে সাধারণ ছাত্র জনতা আরও কঠোর কর্মসূচির ডাক দিতে বাধ্য হবে।
বিকেলে শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বরে সারাদেশে চলমান সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি ও হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় নাগরিক পার্টির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি জেলা শাখার নেতাকর্মীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক সজীব হাসান, জেলার প্রতিনিধি সালেক মাহমুদ, প্রতিনিধি রুবেল হোসেন, অর্ণব হাসান, রিয়াজ তাহসিন, তায়ান হাসান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকার পরও কেমন করে গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। তারা বিগত স্বৈরাচার সরকারের পালানোর ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারেনি। ক্রমাগতভাবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। দেশের মানুষ শান্তি চেয়েছিল, কিন্তু তাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি সাধারণ মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করছে। আমরা চাই আগে দেশ সংস্কার হবে, তারপর দেশে নির্বাচন। যে দলের নেতাকর্মীরা তাদের নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সেই দলের হাতে দেশ ও দেশের মানুষ কখনও নিরাপদ নয়।
একই স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সামাজিক সংগঠন যশোর কমিউনিটি। এসময় বক্তব্য রাখেন যশোর কমিউনিটির সহ-সভাপতি পোদ্দার হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস পরশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, মেহেজাবিন জান্নাত অনন্য, রক্তিম হাসান, সজীব হোসেন প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর বাংলার ছাত্র সমাজ চেয়েছিল একটি সুন্দর, সুস্থ দেশ। কিন্তু আমরা দেখছি ক্রমাগত দেশের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চাঁদার দাবিতে নিষ্ঠুরভাবে দেশের সাধারণ নাগরিকের জীবন কেড়ে নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। এদেশ ও দেশের আইন শাসন ব্যবস্থা নিশ্চুপ। আমরা জুলাই আন্দোলনে রাজপথে নেমেছি, কথা বলেছি, প্রতিবাদ করেছি। প্রয়োজনে আবার আমরা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করব। রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে হবে।
এদিকে, রাজধানীতে পাথর মেরে মানুষ হত্যা ও সারাদেশে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের যশোর জেলা শাখা। রাঙ্গামাটি গ্যারেজ মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জজকোর্ট মোড়ে এসে শেষ হয়।
ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ যশোর জেলা শাখার সভাপতি মুফতি আবুজর বিন হাফিজ-এর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শুয়াইব হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যশোর জেলা সভাপতি মিয়া আব্দুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী সরদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম মহাসিন শেখ, হাফেজ আব্দুর রশিদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের জেলা সেক্রেটারি গাজী শহিদুল ইসলাম, উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা আব্দুল হালিম, শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান, ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইমরান হোসাইন, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা খাইরুল বাশার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মাদ হাবিবুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক আবু রায়হান প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, দেশের কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। মসজিদের ইমামও এদের হাতে নিরাপদ নয়। রাজনীতির নামে এক শ্রেণির সন্ত্রাসীরা মানুষের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলা করছে। প্রশাসন ভাইদের বলব, অপরাধী যে দলের হোক না কেন তাকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। দেশের মানুষ শান্তি চায়।#

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version