বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘উচ্ছ্বাস নয়, বিক্ষোভে’ যশোর-ঢাকা পদ্মাসেতু লিংক প্রজেক্টের ট্রেনকে বরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে যশোরবাসী। মাত্র একটি ট্রেন দিয়ে যশোর ও খুলনাবাসীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টার প্রতিবাদে উদ্বোধনী দিনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি। রোববার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ। আগামী ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পদ্মাসেতু লিংক প্রকল্পের এই ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পদ্মাসেতু লিংক প্রকল্পে খুলনা ও যশোর থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকায় এই ট্রেন চলাচল শুরুর সিডিউল ঘোষণা করেছে রেল মন্ত্রণালয়। গত বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের উপপরিচালক (টিটি) মো. খায়রুল কবির স্বাক্ষরিত এই পত্রে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। মাত্র একটি ট্রেন দিয়ে যশোর-ঢাকা পদ্মাসেতু লিংক প্রজেক্টে খুলনা ও বেনাপোল থেকে এই ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ট্রেনটি জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নামে খুলনা থেকে (খুলনা-ঢাকা-খুলনা) এবং রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস নামে বেনাপোল থেকে যাতায়াত করবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের উপপরিচালক (টিটি) মো. খায়রুল কবির স্বাক্ষরিত পত্র অনুযায়ী, আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে খুলনা ও যশোর রুটে নড়াইল-পদ্মাসেতু হয়ে রেল চলাচল শুরু হবে। ট্রেন সিডিউল অনুযায়ী, সকাল ৬টায় খুলনা থেকে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নাম নিয়ে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। সকাল পৌনে ১০টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। সকাল পৌনে ১১টায় ঢাকা থেকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস নামে বেনাপোলের উদ্দেশে যাত্রা করবে। যশোর জংশন হয়ে দুপুর আড়াইটায় বেনাপোলে পৌঁছাবে। রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বিকেল সাড়ে ৩টায় বেনাপোল থেকে যাত্রা করে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। এরপর ট্রেনটি জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নাম নিয়ে ঢাকা থেকে রাত ৮টায় যাত্রা করে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনায় পৌঁছাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, যশোর থেকে বর্তমানে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকায় যাতায়াত করছে। এর মধ্যে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস যশোর থেকে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি-ভাঙ্গা হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছে। আর খুলনা থেকে ছেড়ে আসা চিত্রা এক্সপ্রেস ঈশ্বরদী হয়ে যমুনা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছে। এই ট্রেনগুলো পূর্বের রুটেই বহাল থাকছে।
এদিকে, পূর্বঘোষিত ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি মাত্র একটি ট্রেন দিয়ে দুই জেলাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টার প্রতিবাদে রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে নতুন ট্রেন উদ্বোধনের দিনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পদ্মাসেতু লিংক প্রজেক্ট উদ্বোধনের ঘোষণায় যশোরবাসী আনন্দিত হতে পারছে না। মাত্র একটি ট্রেন এবং ঘোষিত সময়সূচি যশোরবাসীর মাঝে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে উদ্বোধনী দিন ২৪ ডিসেম্বর যশোর রেলওয়ে জংশনে বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং স্টেশন মাস্টারের মাধ্যমে রেল উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
পূর্বঘোষিত ছয় দফা দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে যশোর-ঢাকা-পদ্মাসেতু লিংক প্রোজেক্টে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন চালুসহ দর্শনা-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন চালু, নিজ শহর থেকে প্রতিদিন ঢাকায় অফিস করার জন্য ট্রেনের সময় সূচী তৈরি করা, আন্তঃনগর ট্রেনে সুলভ বগী যুক্ত করা, ট্রেনের ভাড়া বাস ভাড়া থেকে কম রাখা, ট্রেনের টিকিট প্রাপ্তির সহজ পদ্ধতি চালু করা, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে এই দাবিসমূহ পূরণ না হলে যশোরবাসী বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক জাতীয় হকি দলের ম্যানেজার কাওসার আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুর রহমান হিরু, জিল্লুর রহমান ভিটু, অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু, অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল, হারুন অর রশিদ, দীপঙ্কর দাস রতন, যুগ্ম সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান মিলন, বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান, সংগ্রাম কমিটির নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ শেফার্ড প্রমুখ।