বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলার আট পৌরসভার মেয়র, আট উপজেলার চেয়ারম্যানসহ ১৭ জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করেছে সরকার। তাদের স্থলে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদেরকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ অপসারণ করা হলেও ভাঙ্গা হচ্ছে না পরিষদ। সোমবার এ বিষয়ে পৃথক আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এদিকে, স্থানীয় সরকারের আদেশ জারি হওয়ার প্রথমদিনই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নিয়োগ পাওয়া স্ব-স্ব প্রশাসকরা।
জানা গেছে, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুজ্জামান পিকুলকে। এ পদে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন যশোরের জেলা প্রশাসক।
যশোর পৌরসভার মেয়র পদ হারিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ। তাকে অপসারণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুকে অপসারণ করে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শার্শা উপজেলার চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনকে অপসারণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বেনাপোল পৌরসভার মেয়র নাসির হোসেনকে অপসারণ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)কে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঝিকরগাছা পৌরসভার মেয়র মোস্তফা আনোয়ারকে অপসারণ করে উপজেলার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চৌগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমানকে অপসারণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দীন আল মামুন হিমেলকে অপসারণ করায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইজ্ঞিনিয়ার আশরাফুল কবীর বিপুল ফারাজীকে অপসারণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বাঘারপাড়া পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চুকে অপসারণ করে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে।
অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার অলিয়ার রহমানকে অপসারণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র সুশান্ত কুমার দাসকে অপসারণ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলুকে অপসারণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মণিরামপুর পৌরসভার মেয়র মাহমুদুল হাসানকে অপসারণ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান মফিজকে অপসারণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়লকে অপসারণ করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে।
অপসারণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যশোর পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, ‘সরকারের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত এটি। গণতন্ত্রের ভিত্তি নেই। এই সরকার গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না। যারা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলে, তারাই এই অগণতান্ত্রিক কাজটা করলো। আমি নির্বাচিত, প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হিসেবে ৪৪ হাজার ভোট পেয়েছি। হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো কারণ আমরা আওয়ামী লীগ করি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমলারা বাইরে থেকে এসেছে। তারাই প্রশাসকের দায়িত্ব পাবে। তারা কর্মচারীদের কথার বিশ্বাসে বেশি দূর উন্নয়ন করতে পারবে না। জনগণকে সেবা দিতে পারবে না।’
ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে আমরা তো কোন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেনি। সব দল মতের ভোটারদের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু সরকারের এভাবে হঠকারি সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানাই। এতে সরকারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।’
এর আগে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পরে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকেই এসব জনপ্রতিনিধিদেরকে তাদের পথ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।