রাজগঞ্জ প্রতিনিধি
মণিরামপুর উপজেলা রাজগঞ্জ অঞ্চলের মাঠে হঠাৎ করে পাকা কলা গাছে ভাইরাস রোগের আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে গাছ। এই ভাইরাস পানামা রোগ। আতঙ্কে সম্ভাবনাময় ফসল কলা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক ।
কলাচাষিদের কাছে পানামা রোগ একটি অজ্ঞাত ভাইরাস। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে শত শত হেক্টর জমির কলা বাগান নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে শত শত কৃষক পরিবার। এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে কলা গাছের পাতা হলুদ হয়, পরে ধীরে ধীরে কলাগাছ নিস্তেজ হয়ে মারা যায়।
নেংগুড়াহাটের অঞ্চল হায়াতপুর, শাহাপুর, মোবারকপুর, হাকিমপুর, শায়লাসহ উর্বরা মাটির বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাইরাসটি বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রথমে ২-৪টি কলাগাছ আক্রান্ত হলেও দ্রুত পুরো বাগানে ছড়িয়ে পড়ে অজ্ঞাত। গত কয়েক বছর ধরে পানামা আক্রান্তের হার সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও দুই বছর ধরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। লোকসানের মুখে এ অঞ্চলের চাষিদের কলাচাষে অনাগ্রহ বাড়ছে। এর ফলে কলাচাষে এক প্রকার বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ধুসর উর্বরা মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। মাটির উর্বরতার পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়া কলার উৎপাদন আরও বাড়িয়ে তোলে। নেংগুড়াহাট অঞ্চলে হরিশপুর, রসুলপুর,হায়াতপুর অধিকাংশ কৃষাক সাথী ফসল হিসেবে কলা চাষ ছিল নিয়মিত। কমখরচ ও স্বল্প শ্রমে কলাচাষে লাভের মুখ দেখেন এ অঞ্চলের কলা চাষিরা। এতে অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছেন।
কয়েক বছর ধরে উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে কলা চাষ হলেও এবার মাত্র ৭ হাজার একর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে। উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী মারুফুল হক ও হাবিবুর রহমান বলেন, আগের ফসলে রোগ থাকলে বা রোগাক্রান্ত গাছ থেকে চারা সংগ্রহ করলে পরের বছর আবার পানামা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চারা রোপণের সময় বয়স কম হলে, নিম্নমানের নিষ্কাশিত মাটি এবং অধিক আগাছা ও ঘাস ইত্যাদি থাকলে পানামা রোগ হয়ে থাকে। পানামা আক্রান্ত কলাগাছের পুরনো পাতায় হলুদ বর্ণের দাগ দেখা যায়। পুরনো পাতা ক্রমান্বয়ে হলুদ হয়ে,পাতার দুই পাশে কিনারা শুকিয়ে ও ফেটে ও বোঁটা ফেটে যায়।মাইজ পাতা ঝুলে পড়ে শুকিয়ে যায়,কলাগাছের গোড়ার দিকে মাটির কাছাকাছি লম্বালম্বী ফেটে যায়। আক্রান্ত গাছ থেকে অস্বাভাবিক থোড় বের হয়,আক্রান্ত গাছের রাইজোমের (কান্ড) ভেতর কালচে রঙ দেখা দেয়। কৃষি অফিসার আরো বলেন, রোগমুক্ত মাঠথেকে চারা সংগ্রহ, মাঠ থেকে রোগাক্রান্ত গাছ পুড়িয়ে ফেলা। রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা, রোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়, এমন ফসল সাথী ফসল হিসেবে চাষ না করা।
স্থানীয় কলা চাষি মাহতাব খা, হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০ থেকে ৩৮০টি কলা গাছ রোপণ করা হয়। একটি কলা গাছে রোপণ থেকে বাজারজাত পর্যন্ত ১০০ থেকে ১২০ টাকা খরচ হয়। প্রতিটি কলার কাঁদি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ হিসেবে প্রতি বিঘায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০হাজার টাকা কৃষকের লাভ হয়। সবরি কলা, চাপাসবরি, কালিভোগ, দুধ সাগর ইত্যাদি জাতের কলা চাষ হয়ে থাকে। মোবারকপুর গ্রামের কলা চাষী বিল্লাল হোসেন, মিলন কায়স্থসহ অনেকেই বলেন, তাদের প্রধান ফসল কলা চাষ। কয়েক বছর ভালো ফলন পেলেও গত ২-৩ বছর ধরে কলাগাছে অজ্ঞাত ভাইরাস (পানামা) রোগ দেখা দেয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাই আগের চেয়ে কলা চাষ কম হয়েছে।