বাংলার ভোর প্রতিবেদক
অবৈধ উপার্জনের সব অর্থ দিয়ে স্ত্রীর নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যশোরের সাবেক টিএসআই রফিকুল ইসলাম। স্ত্রী ঝর্ণা ইয়াসমিন স্বামীর অবৈধ সম্পদ গোপন করতে দেখিয়েছেন গরুর খামারের ব্যবসা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি। অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ধরা পড়েছেন রফিকুল ইসলাম-ঝর্ণা ইয়াসমিন দম্পতি। অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বর্তমানে ফরিদপুর জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত আছে। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৮ কোটি ৬০ লাখ ১৯ হাজার ৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম দম্পতি। এরমধ্যে অবৈধভাবে ৭ কোটি ২৯ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। মঙ্গলবার তাদেও নামে দুটি মামলা দায়ের করেছেন দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ে উপ-সহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন।
এ বিষয়ে বুধবার দুদক যশোর উপপরিচালক মো. আল-আমিন জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করার প্রমাণ পাওয়ায় রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ঝর্ণা ইয়াসমিনের নামে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
জানা যায়, ‘যশোরের বহুল আলোচিত টিএসআই রফিকুল ইসলাম ১৯৮৭ সালে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর ২০২৩ সালের ১৬ মে পর্যন্ত তিনি যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন। এ সময়কালে তিনি প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে আয় করেন। যা দিয়ে নিজের ও স্ত্রীর নামে যশোর, খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পদ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গড়ে তোলেন। বিভিন্ন সময় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক টিএসআই রফিক ও তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয়। তাদের সম্পদের বিবরণী পাওয়ার পর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়। অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম ও ঝর্ণা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ থাকার সত্যতা পেয়েছে দুদক। মঙ্গলবার রফিকুল ইসলাম ও ঝর্ণা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।
ঝর্ণা ইয়াসমিনের নামে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়, দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৮ কোটি ৬০ লাখ ১৯ হাজার ৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন তিনি। অবৈধভাবে ৭ কোটি ২৯ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। তার সর্বমোট ১১ কোটি ২১ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জে একটি সাততলা বিশিষ্ট বিল্ডিং, যশোর সদর উপজেলায় ছয়তলা ও দুই তলা বিশিষ্ট দুইটি স্থাপনা এবং যশোর জেলার কোতয়ালী থানার পাগলাদাহ গ্রামে ২৭৮ শতক জমির উপর মায়ের দোয়া গো-খামার রয়েছে। ঝর্ণা ইয়াসমিন অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও নিজ ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন এবং তার স্বামী অভিযুক্ত মো. রফিকুল ইসলাম ওই সম্পদ অর্জনে তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদকের অপর মামলায় ফরিদপুর জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. রফিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়, তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩৮ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন এবং অবৈধভাবে ৭০ হাজার ৫০০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
এর আগে দুদক সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের আবেদনে আদালত গত ২১ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ (সংশোধনী ২০১৯)-এর বিধি ১৮ মোতাবেক রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ঝরনা ইয়াসমিনের অবৈধ সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেন। সবশেষ দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে এ মামলা দুটি করা হয়েছে।