স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
শুক্রবার সপ্তাহের ছুটির দিন। আট বছরের মেয়েকে সাথে নিয়ে যশোর শহরে কেনাকাটা করতে এসেছেন আবুল কাশেম। মেয়ের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এইচএমএম আলী রোডের ফ্রাইডে মার্কেটে। আবুল কাশেম পেশায় একজন দিনমজুর। বাড়তি দামের পোশাক কিনে দেয়ার সামর্থ নেই তার। মেয়ের আবদার মেটাতে স্বল্পমূল্যের পোশাক কিনতে ফ্রাইডে মার্কেটে এসেছেন। শুধু আবুল কাশেম নয়, তার মত অসংখ্য ক্রেতা শুক্রবার সকাল থেকে ভিড় জমান ফ্রাইডে মার্কেটে। সারাদিন চলে কেনাকাটার ধুম।
সকালে দুই একটি করে অস্থায়ী দোকান বসতে শুরু করে এইচ এম এম রোডের দুইপাশ ধরে। স্থায়ী দোকানগুলো বন্ধ থাকায় এই দোকানগুলোর সামনেই বসে অস্থায়ী দোকান। কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ ও মহিলারা বিভিন্ন ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। বিকেল নামতেই রাস্তার দুই পাশ ভরে যায় শার্ট, প্যান্ট, হুডি, কসমেটিক, পাপোস, লুঙ্গি, গামছা, চাদর, ওড়না, ওয়ান পিস, টু পিস, থ্রি পিস, জুতা, মোজা, থালা বাসন, পর্দা, শাড়ি, গজকাপড়সহ বিভিন্ন জিনিসের দোকানে। এই সব দোকানে বিশেষ ছাড়ে পণ্য বিক্রি হয়। দাম তুলনামূলক সর্বসাধারনের সাধ্যের মধ্যে। ফুটপাতের এই সব দোকানে ৩০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দামের পণ্য কিনতে পাওয়া যায়।
ফ্রাইডে মার্কেটে ঢুকতেই কানে ভেসে আসে ‘যা নেবেন একশ’ ‘জোড়ায় জোড়ায় তিনশ’ এমন সব লোভনীয় অফার। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই ক্রেতা সমাগমও বাড়তে থাকে। পছন্দের প্রিয় পণ্যটি কিনতে দোকানে দোকানে ভিড় করে একাধিক ক্রেতা। দাম দরে মিললেই হয় কেনাবেচা। এ সময় এইচএমএম রোডে এতটাই ভিড় হয় যে পায়ে হেঁটে কাঠেরপুল থেকে দড়াটানার মোড়ে উঠতে বাড়তি সময় ব্যয় হয় পথচারির।
ফ্রাইডে মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিপিস ওড়না বিক্রি হচ্ছে ১০০টাকা থেকে ১৫০ টাকা, প্রকারভেদে থ্রিপিস-টুপিস-ওয়ানপিস ১৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, চটিজুতা তিন জোড়া ১০০ টাকা, শিশু-বয়স্কদের শীতের জুতা ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, মোজা ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, হুডি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, টি শার্ট-শার্ট ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, ছোট বড় শীতের প্যান্ট ৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, পাপোস ৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, বিভিন্ন প্রকার স্কুল ও কাপড় বহনের ব্যাগ ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, হাতে বোনা জামার গলা ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, টয়লেট ক্লিনার ১২০ টাকা, ল্যাহেঙ্গা ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, চাদর ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, গজ কাপড় ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, লুঙ্গি ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, দরজা জানালার পর্দা ১২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, শার্ট-প্যান্টের পিস ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, বেডশিট ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। বাচ্চাদের বই খাতা ৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ১০ টাকার চুলের খোপা থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য এই ফ্রাইডে মার্কেটে পাওয়া যায়।
ফ্রাইডে মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা পারভীন বেগম জানান, অন্যন্য দোকানের তুলনায় এখানকার দোকানগুলোতে পণ্যের দাম সাশ্রয়ী। দেখে শুনে কিনতে পারলে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। বর্তমানে টাকা পয়সার সংকট যাচ্ছে। ছেলে মেয়ের জন্য কয়েকটা পোশাক কিনলাম। সব পোশাক ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। সংসারের প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসও দরকার হলে শুক্রবার এই দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে কিনি।’
কলেজ পড়ুয়া তন্ময় সাহা বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন। কলেজ, টিউশনি বন্ধ। মেসের বন্ধুদের সাথে নিয়ে জুতা, টিশার্ট কিনতে এসেছি। এখানে ঝাঁড়ু থেকে শুরু করে প্লেট পর্যন্ত সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়। অনেক দোকান থাকাতে দেখে শুনে দর দাম করে জিনিস কেনা যায়।’
ফ্রাইডে মার্কেটে জামা বিক্রি করতে বসা মো. পারভেজ বলেন, প্রতি শুক্রবার দোকান নিয়ে বসেন তিনি। তার দোকানে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা মূল্যের জামা পাওয়া। প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা কেনা বেচা হয় তার। দোকান দেয়ার জন্য বাজারের ইজাদারকে ৫০ টাকা খাজনা দিতে হয়।’
বাবু সাহা নামে আরেক দোকানি বলেন, প্রতি শুক্রবার নির্দিষ্ট একটা বন্ধ দোকানের সামনে মালামাল বিক্রি করতে বসেন। সর্বনিম্ন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার কেনাবেচা হয়। এই পরিমাণ কেনাবেচায় তার লাভ থাকে প্রায় হাজার টাকা।