নড়াইল সংবাদদাতা
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। তিনি ‘মাটি ও মানুষের শিল্পী’ হিসেবে পরিচিত। যার রঙ তুলিতে দারিদ্র-ক্লিষ্ট ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো হয়েছেন পেশিবহুল এবং শক্তিশালী। এই গুণী চিত্রশিল্পীর ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল।

এ উপলক্ষে নড়াইল জেলা প্রশাসন ও এস.এম সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালায় শিল্পীর রুহের মাগফেরাত কামনা করে কোরআন খতম, শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, শিশুদের অংকিত চিত্র প্রদর্শনী, শিল্পী জীবন ও কর্মেও ওপর আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ এবং গ্রামীণ লোক সংগীত পটগান।

এস.এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর চিত্রশিল্পী তন্দ্রা মুখার্জ্জ্বী জানিয়েছেন, দুর্গাপূজার বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে এবার অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।

চিত্রশিল্পের খ্যাতি হিসেবে শিল্পী সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন।

সৃষ্টিশীল এই শিল্পী নড়াইলের পুরুলিয়ায় ১৯৫৫-৫৬ সালে ‘নন্দন কানন ফাইন আর্ট এন্ড স্কুল, ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে যশোর এম.এম কলেজের একটি পুরোনো হোস্টেলে একাডেমি অব ফাইন আর্ট স্কুল, ১৯৭৮ সালের দিকে জন্মস্থান নড়াইলের মাছিমদিয়ায় ফাইন আর্ট স্কুল এবং ১৯৮৭ সালে নড়াইলের কুড়িগ্রামে “শিশুস্বর্গ” নামে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

১৯৯৩ সালের ১০ আগস্ট শিল্পী নিজ উদ্যোগে চিত্রাংকন, নৃত্য ও সঙ্গীত শিক্ষার জন্য ‘লাল বাউল সম্প্রদায়’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। শিল্পীর মৃত্যুর পর ২০০৩ সালে শহরের কুড়িগ্রামে সরকার শিল্পীর নামে সুলতান কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়েছে। ২০০৯ সালে শিল্পীর ভক্তরা সুলতানের বাগান বাড়ি শহরের পশ্চিম মাছিমদিয়ায় ‘এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত করে।

এসএম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, এ বছরের ১০ আগস্ট নড়াইলের চিত্রা পাড়ের বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস.এম সুলতানের ১০০তম জন্মদিন পালিত হয়। জন্মশতবর্ষ বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালনের প্রস্তুতি থাকলেও জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের কারণে সিমিত কর্মসূচির মধ্য দিয়েই পালিত হয় শিল্পীর জন্মদিন।

এ বিষয়ে নব নিযুক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, ইচ্ছা ছিল শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে নৌকা বাইচ করার। কিন্তু দেশের চলমান অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি, দুর্গাপূজা এবং সর্বশেষ বাইচের ফান্ড কালেকশান একটু সময় সাপেক্ষ বিষয়। আশা করছি আগামী বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হবে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version