শেখ জালাল
শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আরোপে প্রভাব পড়তে শুরু করছে বাজারে। যা সাধারণ মানুষের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাজরে দেখা দিয়েছে নিত্যপণ্যের সংকট। বিশেষ করে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমে গেছে। বাজারে তেল সরবারহ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন খুজরা ব্যবসায়ীরা ও ক্রেতারা। বেড়েছে চাল ও মসলার দাম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শত পণ্যে উপর শুল্ক আরোপ করলেও বাজারে এখন তা কার্যকর না হলেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাজারে চাল ও মসলার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে প্রতি লিটর সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা। দেশি চিনি প্রতিকেজি ১৪০ টাকা , সাদা চিনি ১২৫ টাকা, মুসর ডাল ১৩৫ টাকা বুট ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, আটা প্রতিকেজি ৪২ টাকা, ময়দা প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, চাউল প্রতি কেজি ৭০ টাকা, বাশমতি চাউল প্রতি কেজি ৮৮ টাকা, ছোলার ডাল ১৩৫ টাকা . বিরানী চউল খোলা ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
যশোরের বড় বাজারে তিনটি মুদি দোকান ঘুরে দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে পেরেছেন ক্রেতা হাসান আলী। তাও আবার সাথে একটি অতিরিক্ত পণ্য কিনতে হয়েছে। তেলে সাথে বিরানী চাল বা আটা না কিনলে তেল মিলছে না। এছাড়া যশোর রড় বাজারের নাহার ট্রেডার্স, রহমার ট্রেডার্স সহ ৫-৬ টি মুদি দোকান ঘুরেও মেলেনি ৫ লিটারের বোতল সয়াবিন তেল। ব্যবসায়ীরা জানান, তেল সরবরাহ না থাকায় বেচাকেনা কমে গেছে।
আব্দস সামাদ নামের একজন বিক্রেতা বলেন, কোম্পানি রেট বাড়াবে, এখন সাপ্লাই বন্ধ। দু-তিনদিন ধরে কোনো সয়াবিন তেল বাজারে ঢুকছে না।
একজন বিক্রেতা জানান, অনেক দোকানে সয়াবিন তেল নেই। অনেকেই আবার মজুত করছেন, যেন দাম বাড়লে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। এসব কারণে ভোজ্যতেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ক্রেতারা দোকানে এসে তেল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
বাজার ঘুরে হাসান আলীসহ অনেক ক্রেতা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সয়াবিন তেলের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরতে হলো। বাজারে তেল নাই, এটা তো বাসায় বোঝে না। যে ভাবেই হোক তেল নিতে হবে। তেল না থাকলে রান্না হবে না। পরিচিত দোকানেও তেল পেলাম না। তাই বাধ্য হলে তেলের সাথে সহপণ্য হিসাবে বিরানী চাল কিনতে বাধ্য হলাম।
এ অভিযোগ শুধু হাসান আলীর নয় খোদ ব্যকসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ কোম্পানীগুলো তাদের শ্লো আইটেমের পণ্য না কিনলে তেল দিতে চাচ্ছে না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে তেলে সাথে চাল, আটা, সুজি নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এসব পণ্য বিক্রি করতে তারা ক্রেতাদের শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন।
কোনো কোনো বিক্রেতার অভিযোগ, রমজান মাস শুরুর আগে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আরও এক দফা দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করে নিতে চাইছে কোম্পানিগুলো। মঙ্গলবার সকালে যারা বাজারে গিয়েছেন শুধু ভোজ্যতেল না পেয়ে তাদের অনেকেই হতাশ। হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে মিলছে দু-একটি কোম্পানির সয়াবিন তেল। সেখানেও চাওয়া হচ্ছে বাড়তি দাম, না হয় তেলেন সাথে একটি পণ্য নেয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন।
যশোরে বড় বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। একই অবস্থা যশোরে অন্য খুচরা বাজারগুলোতেও। তেল কেনার জন্য আটা-ময়দা কেনার শর্তজুড়ে দিচ্ছেন।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক তানভিরুল ইসলাম সোহান বলেন, সম্প্রতি সরকার রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর জন্য দুটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি ও ব্যবসায়ের খরচ বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ।
তিনি জানান ব্যবসায়ীদের উপর এ শুল্ক আরোপ শুর হয়ে গেছে। পরিপত্র জারি দিন থেকে ব্যবসায়ীতের কর দিতে হবে। খুব দ্রুত বাজারে পণ্যে দাম বাড়বে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, সরকার আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই কঠিন ঋণের শর্ত হিসেবে কয়েকটি ধাপে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে অন্তর্র্বতী সরকার সম্প্রতি এ অধ্যাদেশগুলো জারি করেছে। তিনি এ বিষয়টি বিবেচনা জন্য সরকারে প্রতি আহবায়ন জানান। এতে জনগণের দুর্ভোগ বাড়াতে পারে।