বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিহাটি এলাকায় কৃষকদল নেতা তরিকুল ইসলাম সরদার খুনের জেরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ হামলার পর থেকে এলাকাটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে এবং সেখানে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। মঙ্গলবার সকালে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রেসক্লাব যশোরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দ্রুত বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহর মশিহাটি গ্রামে নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম সরদারকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। অভিযোগ রয়েছে, ঘেরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এই ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন ডহর মশিহাটি গ্রামের অন্তত ২০টি হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন পণ্ড করে দেয় এবং গান পাউডার ব্যবহার করে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সুন্দলী বাজারেও কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বললেও স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করেছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাত রহিত চন্দন, বাসদ মার্কসবাদী সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফিউর রহমান, বাম গণতান্ত্রিক জোট যশোর জেলার সমন্বয়ক জিল্লুর রহমান ভিটু, বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোরের সম্পাদক তসলিম উর রহমান, সিপিপি যশোরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আমিনুর রহমান হিরু, বাসদ যশোরের সমন্বয়ক শাহজাহান আলী, বাসদ মার্কসবাদি যশোরের নেতা দিলিপ ঘোষ প্রমুখ।
পরিদর্শন শেষে প্রেসক্লাব যশোরে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নেতারা বলেন, ডহর মশিহাটি এলাকার দৃশ্য অত্যন্ত করুণ। সেখানকার সংখ্যালঘু পরিবারগুলো আর্থিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারা দ্রুত এই ঘটনার বিচার দাবি করেন এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমন বিরূপ মন্তব্য করেছেন যে, হিন্দু সম্প্রদায় হওয়ায় তাদের ওপর হামলা হয়েছে। এই ধরনের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান তারা।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা জোর দিয়ে বলেন, কৃষকদল নেতা তরিকুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। কিন্তু একইসঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চালানো এই হামলারও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একটি অপরাধ দিয়ে আরেকটি অপরাধকে আড়াল করা যাবে না।
তারা আরও বলেন, ডহর মশিহাটির এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক রাজনৈতিক দল তাদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে। এটা প্রতিহত করা প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ন্যায্য বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানান তারা।