বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপিকে সংস্কারের ব্যাপারে সবক নিতে হবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যত সংস্কার হয়েছে, তার ৯০ শতাংশ বিএনপি বাস্তবায়ন করেছে। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফাতেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুরে যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যাণ্ড ইণ্ডাস্ট্রি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যশোর শহরের একটি হোটেলে ‘খুলনা বিভাগের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই সভায় অংশ নেন।
সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘সংস্কার অনেক দলের কাছে নতুন কিছু হতে পারে; তবে বিএনপির জন্য নতুন কিছু না। বিএনপি একমাত্র দল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৯০ শতাংশ সংস্কার যা করা হয়েছে সেটা বিএনপিই করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ যেখানে এসেছে, এটা বিএনপির সংস্কারের কারণেই। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংস্কারের মাধ্যমে একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র; সরকারচালিত অর্থনীতি থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে রূপ দিয়েছেন। প্রতিটি পদক্ষেপে সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ এখানে এসেছে। বিএনপি যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তখন আমরা একটি শক্তিশালী অর্থনীতি দাঁড় করিয়েছিলাম; সেটা অব্যাহত থাকলে অনেক আগেই উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতো বাংলাদেশ। কিন্তু বিগত সময়ে লুটপাট করে বাংলাদেশের অর্থনীতি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
নতুন ভ্যাট ও শুল্ক আরোপে সাধারণ মানুষ আরো চাপে পড়বে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, মানুষ নিত্যপণ্যে দামে নাকাল হয়ে পড়েছে।
অনেকের দৈনন্দিন জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে মূল্যস্ফীতির কারণে। এই কর ও ভ্যাটের কারণে অনেক মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাবে।
এই ভ্যাট-ট্যাক্স থেকে যা আয় হবে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ব্যয় হবে ওই মানুষগুলোতে দারিদ্র্যসীমা থেকে টেনে তুলতে। তাই এই সরকারকে বলছি, এই কর, এই ভ্যাট প্রত্যাহার করুন। আপনাদের এখন করা উচিত, স্বৈরাচার সরকারের বাজেট বাতিল করা। আপনারা এখন অন্তর্বর্তী বাজেট ঘোষণা করুন। কারণ স্বৈরাচারের বাজেট তো দুর্নীতির বাজেট। স্বৈরাচারের এই বাজেট স্থগিত করে জনগণকে মুক্তি দিন। এই বাজেট পালন করা আপনাদের কোনো প্রয়োজন নেই। এটি পরিপূর্ণ দুর্নীতির বাজেট। পাঁচ মাস হয়ে গেছে কেন আপনারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট দিচ্ছেন না। বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে আপনারা জনগণের জন্য একটি বাজেট দেন।
বিএনপি ২০০ সিট পেলেও এককভাবে ক্ষমতায় যাবে না বলে মন্তব্য করে বিএনপি সরকারের সাবেক এই বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, বিএনপি ২০০ সিট পেলেও এককভাবে ক্ষমতায় যাবে না, জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এরপর ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে। জনগণের ম্যাণ্ডেট নিয়ে সংস্কার না করলে তা আবার ছুড়ে ফেলে দেবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্স এণ্ড ইণ্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাগুরার সাবেক এমপি ও শিল্পোদ্যোক্তা সালিমুল হক কামাল, বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মাহমুদুল হাসান বাবুল, বেনাপোল সিএণ্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান, খুলনা চেম্বারের পরিচালক হাফিজুল ইসলাম চন্দন, কুষ্টিয়া চেম্বারের পরিচালক খন্দকার জায়েদুল হক, সাতক্ষীরা চেম্বারের সভাপতি নাসির ফারুক খান মিঠু, বাগেরহাট চেম্বারের শেখ মঈনুদ্দিন আহমেদ ও শেখ ফরিদুল ইসলাম, মেহেরপুর চেম্বারের পরিচালক একেএম আনোয়ারুল হক, ঝিনাইদহ চেম্বারের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের শরিফুজ্জামান শরিফ, নড়াইল চেম্বারের মনিরুল ইসলাম, যশোর চেম্বারের সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল, নোয়াপাড়া সার ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি শাহজালাল হোসেন, ব্যবসায়ী চিন্ময় সাহা এবং আক্তারুজ্জামান তুহিন। সভা পরিচালনা করেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের সদস্য শ্যামল দাস। মতিবিনিময় সভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা নিজ নিজ জেলায় বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।