স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
“বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সমৃদ্ধি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যশোর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপÍাহ, বিজ্ঞান মেলা এবং ৮ম জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড। বৃহস্পতিবার সকালে বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। জেলা প্রশাসন যশোরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই মেলার তত্ত্বাবধান করছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর এবং পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
দুই দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত এই বিজ্ঞান জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ মেধা ও মনন কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবন করা প্রজেক্ট সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত প্রদর্শন করার সুযোগ পাচ্ছেন। এই সব প্রজেক্টের মধ্যে সবার নজর কেড়েছে এআই কন্টোলার সিস্টেমের একটি ‘আটো আই স্মার্ট কার’। জেলার চৌগাছা উপজেলার চৌগাছা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিকুল ইসলাম রিফাত এই গাড়িটি তৈরি করেছেন। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে বৃদ্ধা অঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ মাস পরিশ্রম করে এই গাড়ি বানিয়েছেন। গাড়ি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। দিনমজুর বাবা আবু খায়ের ছেলেকে তার তৈরি গাড়িসহ ভ্যান গাড়িতে করে মেলায় নিয়ে এসেছেন। প্রদর্শনী শেষে রিফাত বন্ধুদের সাথে নিয়ে সেই গাড়ি চড়ে বেরিয়েছেন শহরের দড়াটানা, কোর্ট মোড়, কালেক্টরেট চত্বর এলাকায়। এ সময় অবাক বিস্ময় নিয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে ছিলেন অনেকেই।
যশোর জেলা স্কুল অডিটোরিয়ামের সামনে কথা হয় অনিকুল ইসলাম রিফাতের সাথে। তিনি বলেন, প্রয়োজন থেকেই আবিস্কার হয়। আমার শারীরিক অক্ষমতার কারণে আমার চলাচলে অসুবিধা হত। আমি এমন কোনো কিছুর প্রয়োজন অনুভব করছিলাম। তারপর নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে এআই কন্ট্রোল এই গাড়িটি তৈরি করেছি। আমার মত যারা একা একা চলাচল করতে পারে না এই গাড়িটি তাদের উপকারে আসবে। আমি মনে করি আমার এই উদ্ভাবন যদি বাজারে আনা হয় এটা দেশের হাজার হাজার প্রতিবন্ধির চলাচলে ভূমিকা রাখবে।
রিফাতের বাবা আবু খায়ের বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে বিজ্ঞান মেলায় এসেছি। তার এই গাড়ি সবার নজর কেড়েছে।
তাজুল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী বলেন, দূর থেকে দেখলাম একটা ছোট্ট গাড়ি দ্রুত জিলা স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে স্কুল মাঠের দিকে যাচ্ছে। এসে দেখি মেলায় একজন শারীরিক প্রতিবন্ধি ছেলে নিজের তৈরি গাড়ি চালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিষয়টা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি। মানুষের ইচ্ছা শক্তির কাছে শারীরিক জটিলতা আসলে কিছুই না।
চৌগাছা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, জুনিয়র সেক্টরে আমাদের এই রিফাতের প্রজেক্টটা। আমাদের স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করছে সে। রিফাত শারীরিক প্রতিবন্ধি হলেও সে অন্যদের তুলনায় যথেষ্ঠ মেধাবী।