বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে চাতাল শ্রমিক মেশকাত হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মোবাইল ফোনে কথা বলা বন্ধ করে দেয়ায় দুই লাখ টাকার চুক্তিতে সৌদি প্রবাসী প্রেমিকা নাজমার নির্দেশেই মেশকাতকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পুলিশ সুপারের অফিস সংলগ্ন ডিবির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুপন কুমার সরকার। আটকরা হলেন, সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা গ্রামের চুন্নু গাজীর মেয়ে রিক্তা পারভীন (৩০) ও আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের নিজাম সরদার (৬০)।
ডিবি পুলিশ জানায়, পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের নিজাম প্রামাণিকের ছেলে মেশকাত যশোরের পদ্মবিলায় ইলা অটোরাইচ মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গত বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জোকা কমলপুর গ্রামের ঈদগাহ সংলগ্ন একটি ধানক্ষেতে থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ডিবি পুলিশ হত্যার কারণ উদঘাটনে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে সাতক্ষীরা সদর ও আশশুনিতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় রিক্তা পারভীন ও নিজাম সরদার নামে দুজনকে।
জিজ্ঞাসাবাদে রিক্তা জানান, তার দেবরের তালাক দেয়া স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান মেশকাত। এক বছর আগে দেবরের তালাক দেয়া ওই স্ত্রী নাজমা সৌদিআরব চলে যান। সেখান থেকে নিয়মিত মেশকাতকে টাকা পাঠালেও পরে আস্তে আস্তে নাজমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেশকাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নাজমা। এরপর দুই লাখ টাকার চুক্তিতে তিনি হত্যার দায়িত্ব নেন।
পরবর্তীতে নাজমা মেশকাতকে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা বাজার থেকে স্বর্ণ নিয়ে তার বাবার কাছে দিয়ে আসতে বলেন। ওই টোপ কাজে লাগিয়ে রিক্তা তার প্রেমিক যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার শাহিনকে নিয়ে মেশকাতকে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে নিয়ে বের হন। পথিমধ্যে মেশকাতকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলায় ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে ফেলে দেয়া হয়।
ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুপন কুমার সরকার জানান, আসামিদের কাছ থেকে মেশকাতের ব্যবহৃত দুটি ফোন ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত শাহীনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া আটকদের মেশকাত হত্যা মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নিহত মিসকাতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী এরশাদ আলম বলেন, ‘আমার ভাই চার থেকে পাঁচ বছর ধরে যশোরে একটি অটোরাইস মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আট দিন আগে ভাই বাড়ি থেকে কর্মস্থলে গেছেন। বুধবার রাত ৮টার দিকে ভাই তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। ফোনে ভাই জানিয়েছিলেন, তাঁরা ছয়জন মিলে একসঙ্গে অন্য এলাকায় ধান আনতে যাচ্ছেন। রাত ১০টায় বাসায় ফিরে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলেন। এর পর থেকে ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।’ উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ভোরে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের জোঁকা ঈদগাহসংলগ্ন একটি ধানক্ষেতে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। পরে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা হয় যে লাশটি মেশকাত হোসেনের।