বাংলার ভোর প্রতিবেদক
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্মস্থান যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে শুরু হয়েছে মধুমেলা। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাত দিনব্যাপি মেলার উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। প্রধান অতিথি ফিতা কেটে, কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। এছাড়া অতিথিরা মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈতৃক ভিটায় স্থাপিত কবির আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপর জুলাই বিপ্লব কর্ণার ও কৃষি কর্ণারের উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, ‘মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের অমর রত্ন। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়; বিশ্বে সমাদৃত। তার যে দেশপ্রেম ছিলো, সেটা বিরল দৃষ্টান্ত। তার উদাহরণ কপোতাক্ষ নদ কবিতা। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি প্রকাশ করেছেন, দেশপ্রেমতা কতটা গভীর। তার দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির, কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মোস্তফিজুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর পৌরসভার সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহক, যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ লিটু, যশোরের প্রাচ্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা গবেষক ও লেখক বেনজীর খান, খুলনা বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন, কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন, কেশবপুর উপজেলা জামায়াতে আমির অধ্যাপক মোক্তার আলী, যশোর জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জেসিনা মুর্শিদ প্রাপ্তি, মুখ্য সংগঠক আল মামুন লিখন, সদস্য শেখ সুজন ও কেশবপুর ছাত্র প্রতিনিধি মাসফি চৌধুরী অরিন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন। রাতে মণিরামপুর আনন্দ অপেরা অভিনীত চরিত্রহীন যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা শেষে মধু মঞ্চে নাটক, যাত্রাপালাসহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবারের ন্যায় মেলায় আগতদের মাঝে মেলা আকর্ষণীয় করে তুলতে মেলার উন্মুক্ত মঞ্চে কবিতা আবৃত্তি, নাটক, যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া মেলার মাঠে আনন্দ উপভোগের জন্য যাত্রা, কৃষি মেলা, সার্কাস, মৃত্যুকূপ, নাগোরদোলা, যাদু প্রদর্শনী, কৌতুকসহ বিভিন্ন বিনোদনেরও আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে, ২৫ জানুয়ারি বাংলা কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, প্রথম মহাকাব্য ও সনেট রচয়িতা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১ জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও সাগরদাঁড়িতে বসল গ্রামীণ মেলা। মেলা উপলক্ষে সাগরদাঁড়িকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজারো মধুভক্তের উপস্থিতিতে এবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে কপোতাক্ষ নদের পাড়। শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই মেলা দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন মানুষ। সাগরদাঁড়িতে মধুমঞ্চে ৭ দিনব্যাপি কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা অংশ নেবেন। এবারও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকেল মধুসূদন পদক প্রদান করা হবে। মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসন ব্যাপক তৎপর রয়েছে। সাত দিনব্যাপি এ মেলা শেষ হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি।