বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর মাগুরা রুটে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে দুই দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত শনিবার থেকে তারা যশোর থেকে মাগুরা অভিমুখে আন্তঃজেলার কোন বাস নিয়ে যাচ্ছেন না। এ রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুটি জেলার হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যশোর থেকে মাগুরা পর্যন্ত আন্তঃজেলা বাস মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনে নামে শ্রমিকদের প্রতি ট্রিপে ২৮শ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। শ্রমিকেরা এই চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করাতে মূলত মালিক শ্রমিকের এই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি। একই সাথে পারিশ্রমিক বৃদ্ধির দাবি উঠিয়ে আন্দোলন বৃহৎ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন চালক, সুপারভাইজার ও হেলপাররা।
সরেজমিনে ঘুরে ও শ্রমিক ইউনিয়ন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে যশোর-মাগুরা মহাসড়কে মাগুরার ভায়না মোড় পর্যন্ত প্রতিদিন এই রুটে অর্ধশতাধিক বাস ১৮০টি ট্রিপ দেয়। খাজুরা বাস মালিক সমিতি, যশোর বাস মালিক সমিতি ও মাগুরা বাস মালিক সমিতি আন্তঃজেলা এই রুটে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। জনমানুষের নিজ নিজ গন্তব্য পৌঁচ্ছে দিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক এই প্রতিনিয়ত কাজ করছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। কিন্তু প্রতিটি বাসেই এই রুটে যাওয়া এবং আসায় শ্রমিকদের অন্তত ৬টি স্থানে ২৮ শ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এ চাঁদা তিন বাস মালিক সমিতির কল্যাণ ফান্ডের নামে তোলা হয়ে থাকে। শ্রমিকেরা জানান, প্রতি ট্রিপে ২৮শ’ টাকা চাঁদা, ৫২শ’ টাকার জ্বালানি খরচ আর বাস মালিকদের ভাড়া পরিশোধে শ্রমিকদের তেমন টাকা থাকে না। একই সাথে অন্যান্য রুটের তুলনায় এই রুটে চালক-সুপারভাইজার ও হেলপারদের সুযোগ-সুবিধা কম। ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসলেও মালিকপক্ষ আমলে নেয়নি। তাই পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অংশ হিসাবে শনিবার থেকে তারা কর্মবিরতি পালন করছে। মাগুরা বাস মালিক সমিতির বাসগুলো ভাইনা মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে সিমাখালি ব্রিজ পর্যন্ত আনছেন। সেখান থেকে যশোর অভিমুখী যাত্রীদের আলাদা আলাদা মাধ্যম যেমন ইজিবাইক ও সিএনজিতে যশোরে আসতে হচ্ছে। আর যশোর থেকে মাগুরাগামী যাত্রীদের ইজিবাইক বা সিএনজিতে করে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যশোর খাজুরা স্ট্যান্ড ও মাগুরা ভায়না বাসস্ট্যান্ড ঘুরে রাস্তায় শহরমুখী আন্তজেলা কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন যাত্রীরা। উপায় না থাকায় জরুরি কাজে বের হওয়া অনেক যাত্রী কাভার্ড ভ্যান ও ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে শহরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। দু’ তিনগুণ ভাড়া দিয়ে ইজিবাইক ও সিএনজিতে উঠেও অনেক মানুষকে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। তবে সড়কে মালবাহী ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
মাগুরার সৌমন্দ্র দেবনাথ নামে এক বৃদ্ধা যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে। তিনি বলেন, ‘গত দুই দিন আগে যশোরে মেয়ের বাড়িতে এসে ছিলাম। মেয়ে বাড়ি থেকে অনেক জিনিসপত্র নিয়ে স্ট্যান্ডে এসে দেখি; বাস যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ বসে থেকে বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে যাওয়ার সিন্ধান্ত নেন এই যাত্রী।’ রহিম মন্ডল নামে মাগুরা থেকে যশোর গামি এক যাত্রীর সঙ্গে সিএনজিতে করে যশোরে পৌঁছান এই প্রতিবেদক। রহিম মন্ডল বলেন, ‘ভায়না মোড় থেকে বাসে যশোরের ভাড়া ১০০ টাকা। কর্মবিরতির কারণে ভাইনা থেকে মাগুরার সিমাখালি পর্যন্ত সেখানকার বাসে এসে বলে আর বাস যাবে না। এখানেই নিবে যেতে হবে। তার পর নেমে একটি সিএনজিতে একশ’ টাকা দিয়ে যশোর খাজুরা স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হয়েছে। ফলে দুবার পরিবহন পরিবর্তনে একদিকে যেমন ভোগান্তি, অন্যদিকে একশ’ টাকার ভাড়ার জায়গায় তার দেড়টাকা খরচ করে নিদিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে থাকে। এই রুটের যাত্রীদের দাবি, ‘দ্রুত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে বা দুপক্ষের বৈঠক করে সমস্যা সমাধান করে জনগণের ভোগান্তি কমানোর।
যশোর পরিবহন শ্রমিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু বলেন, ‘দুইদিন ধরে কর্মবিরতি চলছে। এক যুগের বেশি সময়ে বেঁধে দেয়া বেতনে কাজ করছে এই রুটের শ্রমিকেরা। মাঝে কয়েকটা টাকা বৃদ্ধি করলেও বর্তমান বাজার মূল্যে সংসার চলছে না। এছাড়া এই রুটে এখন আগের মতো যাত্রী নেই। তার মধ্যে বাস মালিক সমিতির বিভিন্ন কল্যাণ ফাণ্ডের নামে বিভিন্ন চাঁদা তোলা হচ্ছে। চাঁদা আর জ্বালানির খরচ বাদ দিলে এখন আর বাসে তেমন থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে জনগনের ভোগান্তি হলেও কর্মবিরতি ছাড়া উপায় নেই বলে জানান তিনি। দুই দিন ধরে কর্মবিরতি করলেও দুপক্ষের মধ্যে এখনো বসাবসি হয়নি বলে জানান তিনি।’
যশোর বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের মালিকদের সমিতির উন্নয়নের জন্য তো তাদের চাঁদা দিতে হবে। ওনারা আমাদের দেখবে; আমরা তাদের দেখবো। তবে তারা যে বেতনসহ নানা সুবিধা বাড়ানোর দাবি তুলছে, সেটা একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর সিন্ধান্ত হয় জেলার ১৮ রুটে মালিক সমিতি ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় ফেডারেশন থেকে। তার আগেই তারা বাস বন্ধ করে কর্মবিরতি করছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করছি।’